পূর্ব ইউক্রেনের ক্রেমিন্না শহরের আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, সবদিক থেকে রুশ বাহিনীর আক্রমণের মুখে ইউক্রেনীয় সেনাদের শহরটি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রুশ সেনারা শহরটি দখলে নিয়েছেন। পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রুশ বাহিনীর নতুন ধাপের অভিযান শুরুর পর এটিই তাঁদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া প্রথম শহর। আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর আগের হিসাব অনুসারে ক্রেমিন্না শহরে ১৮ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস ছিল। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, ‘দানবেরা (রুশ বাহিনী) ক্রেমিন্নার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তারা শহরের ভেতরে ঢুকে গেছে। আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করতে হয়েছে। তারা নতুন করে বিভিন্ন সুরক্ষিত জায়গায় অবস্থান নিয়েছে এবং রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছে।’
সেরহি হাইদাই আরও বলেন, ‘কতজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, তার সংখ্যা হিসাব করা অসম্ভব। আমাদের কাছে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য আছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।’ তবে সেরহি মৃত ব্যক্তিদের যে সংখ্যা জানিয়েছেন, তা কোন সময় থেকে হিসাব করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।
চলমান লড়াইয়ে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। গতকাল দেশটির সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেন। নতুন করে বিভিন্ন শহরে হামলা শুরু করেন তাঁরা। একে যুদ্ধের নতুন ধাপ বলে উল্লেখ করেছে ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই পক্ষই।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ১৩টি ইউক্রেনীয় সেনা অবস্থান ও অস্ত্রাগার ধ্বংস করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ওয়ারহেড সংরক্ষণাগারসহ আরও ৬০টি ইউক্রেনীয় সামরিক স্থাপনায় হামলা করেছে বিমানবাহিনী।
গত সোমবার উত্তর–পূর্ব ইউক্রেন থেকে দক্ষিণ–পূর্ব ইউক্রেন পর্যন্ত ৪৮০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে হামলা শুরু হয়। রাশিয়া বলছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহর এবং দনবাসের পশ্চিমাঞ্চলের জাপোরিঝিয়া ও দিনিপ্রোর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর গত মাসে ক্রেমলিন ঘোষণা দেয়, রুশভাষী–অধ্যুষিত পূর্ব দনবাস অঞ্চলের দখল নেওয়াটাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।
ক্রেমিন্না শহর দখলের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত বড় শহর ক্রামাতোরস্ক দখলের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল রুশ বাহিনী।
গতকাল সকালে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে নতুন সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হলো ভূমি দখল করা, পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগ তৈরি করা এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে ভেঙে দেওয়া।