বাইডেনের নতুন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার ট্রিলিয়ন ডলার আটকে যেতে পারে

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের আগে ইউক্রেন সেনাদের মহড়াফাইল ছবি: এএফপি

অনেকটা ঘোষণা দেওয়ার মতো করেই ইউক্রেনে হামলা করে বসেছে রাশিয়া। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র জারি করেছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ আটকে যেতে পারে। বাইডেন হুঁশিয়ার করে বলেছেন, রাশিয়ার ওপর সামনে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে।    

ইউক্রেনের মারিওপোলে রুশ সেনারা
ছবি: রয়টার্স

হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানান বাইডেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে মস্কোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সীমাবদ্ধ হবে। এ সময় তিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরও শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিন আগ্রাসী। তিনি এই যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন। এখন তিনি এবং তাঁর দেশ এর পরিণতি ভোগ করবে।’

রাশিয়ার ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়ে বাইডেন বলেন, রাশিয়ার ৪টি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যাদের অন্তত এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক শেরব্যাংকের নামও রয়েছে। অর্থাৎ, আমেরিকায় থাকা রাশিয়ার সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

এ সময় বাইডেন আরও বলেন, পুতিনের ঘনিষ্ঠ ধনী রাশিয়ানদের ওপরও পর্যায়ক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সামনের দিনগুলোতে দুর্নীতিবাজ ধনকুবের রুশদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা চালিয়ে যাব।’

বৃহস্পতিবার দেওয়া নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে বাইডেন বলেন, পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ‘আলোচনায় রয়েছে’।
প্রায় চার মাস ধরে ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে মস্কো সেনা মোতায়েন করতে থাকে। তারা প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন করে। এই অঞ্চলে গত এক মাস ধরে চলা অচলাবস্থার পর স্থানীয় সময় গত বুধবার রাশিয়া ইউক্রেনে বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করে। এর জবাবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।

আরও পড়ুন
বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: এএফপি

ইউরোপীয় দেশগুলোও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য কয়েক ডজন রাশিয়ান ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লটকে যুক্তরাজ্যের আকাশসীমা থেকে নিষিদ্ধ করেছে দেশটি।

এর আগে তিন দিক থেকে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। এ ঘটনায় আরও রক্তপাত এড়াতে ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র পরিত্যাগের আহ্বান জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ, তৎপরতার মুখে এ হামলা শুরু হয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ হামলার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বড় ধরনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

ইউক্রেনে হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির মিত্ররা এর নিন্দা জানিয়েছে। রাশিয়ার ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেয় তারা।

এদিকে রুশ হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটিতে সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি সাধারণ মানুষকে অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মার্কিন বাহিনী ইউক্রেনে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবে না। কারণ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহগুলোতে ইউরোপে অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে ন্যাটোর সদস্য এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ায় অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে গ্যাসের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন উদ্বেগের মধ্যে জো বাইডেন বলেছেন, মার্কিন তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে এই মুহূর্তটির সুযোগ নেওয়া উচিত হবে না।

জো বাইডেন বলেন, প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে অতিরিক্ত ব্যারেল তেল ছেড়ে দেওয়া হবে। তাঁর প্রশাসন জ্বালানি শিল্পের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

এদিকে রাশিয়ার এই সামরিক অভিযানের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তির আহ্বান জানান। তবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও ছিল তাঁর ভাষণে। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের প্রয়োজন নেই। দরকার নেই কোনো রক্তাক্ত যুদ্ধের। কিন্তু আমাদের ওপর যদি সামরিক অভিযান চলে, আমাদের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা করা হয়, আমাদের জীবন, আমাদের শিশুদের জীবন ধ্বংসের চেষ্টা হয়, তাহলে আমরা প্রতিরোধ করবই।’

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, রুশ হামলার পর ইতিমধ্যে এক লাখ মানুষ তাঁদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। যাদের মধ্যে হাজারো মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশে অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে রোমানিয়া ও মলদোভায় বেশি মানুষ গেছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সেনার যখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সাহায্য চেয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববাসীর সাহায্যের প্রয়োজন আছে।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ব্লিঙ্কেন তাঁকে আত্মরক্ষার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন।
আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান সিএনএন অবলম্বনে।