স্যার ডেভিড অ্যামেসের স্মৃতির প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (ডানে)। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার (মাঝে) ও জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বেন-জুলিয়ান হ্যারিংটন। গতকাল যুক্তরাজ্যের অ্যাসেক্সে
ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতা স্যার ডেভিড অ্যামেস (৬৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন দেশটির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ নিয়ে ৫ বছরে ২ জন আইনপ্রণেতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন দেশটিতে। এর মধ্যে সর্বশেষ পাঁচ বছরে খুন হলেন দুজন আইনপ্রণেতা। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিরাও এ নিয়ে চাপের সৃষ্টি করছেন। খবর এএফপির।

এদিকে ডেভিড অ্যামেস হত্যাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দলের নেতারা ডেভিড অ্যামেস হত্যাকাণ্ডে শোক জানিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও পার্লামেন্টে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

ডেভিড অ্যামেস গত শুক্রবার নিজ নির্বাচনী এলাকা লন্ডনের পূর্বে এসেক্সের লেই–অন–সি শহরে একটি গির্জায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমালীয় বংশোদ্ভূত ২৫ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি।

এর আগে ২০১৬ সালে জো কক্স নামের লেবার পার্টির এক পার্লামেন্ট সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাঁকে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তার আগে ২০১০ সালে স্টিফেন টিমস নামের লেবার পার্টির একজন আইনপ্রণেতা ছুরিকাঘাতের শিকার হন। এ ছাড়া ২০০০ সালে ছুরিকাঘাতে নিহত হন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি নাইজেল জোনসের সহকারী অ্যান্ড্রু পেনিংটন।

এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল ৬৫০ জন পার্লামেন্ট সদস্যের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাব। আমরা উন্মুক্ত, গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। আমরা কোনো ব্যক্তির আক্রমণে পিছিয়ে যাব না।’

হাউস অব কমনসের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলও পার্লামেন্ট সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেন। এ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে পুরোপুরি নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের মুখোমুখি বৈঠক স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন কনজারভেটিভ এমপি টোবিয়াস এলউড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ডেভিড অ্যামেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি ‘ঝুঁকিপূর্ণ উগ্রবাদীদের’ তালিকায় ছিলেন। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ তদন্তকাজ পর্যালোচনা করছে।

পুলিশ বলছে, ডেভিড অ্যামেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, তদন্তের অংশ হিসেবে লন্ডনের দুটি ঠিকানার খোঁজ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তি একাই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন।

এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতকাল শনিবার নিহত আইনপ্রণেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি গির্জার বাইরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে একাত্মতা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার, হাউস অব কমনসের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল।