রুশ গণমাধ্যম বন্ধের পাল্টা ব্যবস্থা মস্কোর

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি : রয়টার্স

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে রুশ গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পশ্চিমা বিভিন্ন সংস্থা। পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে মস্কোও। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তুলে বেশ কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে ক্রেমলিন। এ তালিকায় রয়েছে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি ইউরোপ, ডয়চে ভেলের মতো সম্প্রচারমাধ্যম। খবর রয়টার্সের।

গত শুক্রবার ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া। এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম রাশিয়া টুডে (আরটি) ও স্পুতনিকের কার্যক্রম সীমিত করার জন্য বেশ কিছু পশ্চিমা প্রযুক্তি কোম্পানি ব্যবস্থা নেয়। ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলোর বিজ্ঞাপন বাবদ আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষ উইন্ডোজ অ্যাপ স্টোর থেকে আরটির মোবাইল অ্যাপসগুলো সরিয়ে দিয়েছে মাইক্রোসফট।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পশ্চিমা মিডিয়া সংস্থাগুলো বিশ্বকে আংশিক খবর দেয় এবং প্রায়ই রুশবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলে রাশিয়া বারবার অভিযোগ করেছে। মস্কোর অভিযোগ, পশ্চিমা নেতাদের ইরাক ইস্যু এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো তুলে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে সেখানকার গণমাধ্যম।

রাশিয়ার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রোসকমনাদজরের পক্ষ থেকে বলা হয়, রুশ সংবাদমাধ্যমের প্রতি বেশ কয়েকটি বৈষম্যমূলক আচরণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। পরে রোসকমনাদজর জানায়, টুইটারের ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। ফেসবুকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনস্টাগ্রামের ওপরও থাকছে নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে রুশ আইনপ্রণেতারা নতুন একটি আইন প্রণয়নে সম্মতি জানিয়েছেন। এ আইনের আওতায় ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশকারীদের কঠোর কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হবে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশকারীদের কঠোর সাজার বিধান রাখা হচ্ছে এতে।

রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনো ভুয়া খবর প্রকাশের কারণে গুরুতর কোনো প্রভাব পড়লে তার জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান থাকছে নতুন আইনে। যাঁরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাবেন, তাঁদের জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রেখেও সংশোধনী আনা হয়েছে।

রোসকমনাদজর বলেছে, বিদেশিদের মালিকানাধীন তথ্য উৎসের সাইটে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, রাশিয়ায় তারা ইচ্ছাকৃত এবং পদ্ধতিগতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।

রাশিয়ার যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক বলেছে, তাদের দেশের গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে রাশিয়ার গণমাধ্যমে বিরুদ্ধে ২৬ বারের বেশি বৈষম্যমূলক ঘটনা ঘটিয়েছে ফেসবুক।

এর আগে এ সপ্তাহে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম আরটি ও স্পুতনিককে নিষিদ্ধ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মেটা, গুগল, ইউটিউব ও টিকটক ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরটি ও স্পুতনিককে নিষিদ্ধ করে।

ফেসবুকের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেছেন, শিগগিরই লাখ লাখ সাধারণ রাশিয়ান নিজেদের নির্ভরযোগ্য তথ্য থেকে বিচ্ছিন্ন দেখতে পাবেন।

বিবিসি বলেছে, তারা রাশিয়ান নিষেধাজ্ঞায় নিবৃত্ত হবে না। সঠিক ও স্বাধীন তথ্য পাওয়া মৌলিক মানবাধিকার, যা রাশিয়ার জনগণের জন্য বন্ধ হওয়া উচিত নয়। লাখো মানুষ বিবিসির খবরের ওপর নির্ভর করে। রাশিয়াসহ সারা বিশ্বে খবর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।