স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় আজ শুক্রবার পর্দা নামছে জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত জলবায়ু নিয়ে এই বৈশ্বিক সম্মেলনের। তবে ধনী দেশগুলোর ওপর কার্বন কর বসানোসহ আরও কিছু বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত মতৈক্য আসেনি। তাই শেষ মুহূর্তে এসেও গতকাল বৃহস্পতিবার বারবার দেশগুলোর প্রতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, হাতে সময় আর বেশি নেই। এখনই দ্রুত মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে। খবর রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।
এর আগে আগামী বছরের মধ্যে আরও বড় পরিসরে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্য পূরণের আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ করা হয়েছে কপ ২৬-এর খসড়া ঘোষণা। গতকাল কপ ২৬ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মা গতকাল বলেছেন, ‘খসড়া ঘোষণার অনেক বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থায়নের বাস্তবসম্মত কৌশল খুঁজতে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আশা করছি, সম্মেলন থেকে উচ্চাভিলাষী, ব্যাপক ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি ফলাফল পেতে আজ শুক্রবারের মধ্যে দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছাবে।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিশ্রুতি কপ ২৬-এর বড় একটি অর্জন। এটা এই সম্মেলন থেকে উচ্চাভিলাষী ফলাফল পেতে পাথেয় হবে। চূড়ান্ত ঘোষণায় পৌঁছানোর পথে এখনো বিভিন্ন বিষয়ে দেশগুলোর মতবিরোধ রয়েছে উল্লেখ করে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিস জনসন বলেছেন, এখন সময় সবার একযোগে এগিয়ে আসার। অতীতের মতবিরোধ দূর করার সংকল্প দেখানোর।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন নৈতিকতার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে কপ ২৬, এমন মন্তব্য করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, সময় বয়ে যাচ্ছে; এই আয়োজন ব্যর্থ করা যাবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নীতির প্রধান ফ্রান্স টিমারম্যানস বলেছেন, কপ ২৬ সফল করতে ধনীদের ওপর কার্বন কর আরোপ এবং গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়ে আলোচনায় আরও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাতে হবে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে আটকে রাখার লক্ষ্য পূরণে বিশ্ব এখনো পিছিয়ে রয়েছে। তবে গ্লাসগোর খসড়া ঘোষণায় আগামী বছরের মধ্যে দেশগুলোকে এই বিষয়ে নিজস্ব লক্ষ্য পূরণের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়া থেকে সরে আসতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির অন্যতম শীর্ষ উত্তোলক দেশ সৌদি আরবের এমন প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে।
তবে গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো শিল্পোন্নত-ধনী দেশগুলোর কাছে প্রতিশ্রুত ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনড় রয়েছে। কেননা ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। এখন এই প্রতিশ্রুতি পূরণে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছে ধনী দেশগুলো।
এই বিষয়ে গতকাল ফ্রান্স টিমারম্যানস বলেন, ‘আমি আশা করছি কপ ২৬ শেষ হওয়ার আগেই এ লক্ষ্য আগামী বছরের মধ্যে পূরণ করার ঘোষণা আসবে। কেননা ধনী দেশগুলো লক্ষ্য পূরণের খুব কাছে রয়েছে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ অর্থায়নের পরিমাণ বছরে ১৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে জলবায়ু তহবিলে ধনী দেশগুলো ৮০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে উপকূলীয় এলাকা বাঁচানোর মতো অভিযোজন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ব্যয় করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলে অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।