ইউক্রেন সংকট
সামরিক মহড়ায় ‘বার্তা’ রাশিয়ার
১০ দিনের এই মহড়ায় ৩০ হাজার সেনা অংশ নিচ্ছে। পাল্টা সীমান্তে কড়া পাহারায় ইউক্রেনের সেনারাও।
ইউক্রেনে হামলা থেকে বিরত রাখতে মস্কোয় গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। বৈঠকের পর মাখোঁ আশ্বস্ত করেছিলেন, আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে। পুতিনও বলেছিলেন, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই ক্রেমলিনের। কিন্তু এক দিন যেতে না যেতেই রাশিয়ার বড় ধরনের সামরিক মহড়ার খবর পাওয়া গেল। মিত্র বেলারুশের সঙ্গে ওই মহড়া আজ শুরু হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনের সেনারা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এর আগেই ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া ১ লাখ ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। এখন বেলারুশের সঙ্গে ক্রেমলিনের সামরিক মহড়া নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে ইউক্রেন সরকারকে। ১০ দিনের ওই মহড়া শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এই মহড়ার জন্য গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে সেখানে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে মস্কো। ধারণা করা হচ্ছে, এ মহড়ায় ৩০ হাজার সেনা অংশ নেবে। সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানও নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের সাবেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আলেকসান্দার খারা আল–জাজিরাকে বলেন, রাশিয়া এই মহড়ার মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছে, ইউক্রেন দখল করে নেওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। এটাকে গুরুত্বের সঙ্গেই নেওয়া উচিত।
বেলারুশে রাশিয়ার সামরিক মহড়া ইউক্রেন নিয়ে সংঘাতে ‘উত্তেজনা বাড়ানোর’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার এই মহড়াকে উত্তেজনা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছি। এটা উত্তেজনা হ্রাসের কোনো পদক্ষেপ নয়।’
ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুই দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। এই দুই দেশের মানুষ হরহামেশাই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারতেন। কিন্তু ২০১৪ সালে মস্কোপন্থী ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর সেই সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এর জেরে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া। এখন মস্কো ইউক্রেনে ‘পুতুল সরকার’ গঠন করতে দেশটিতে হামলার পরিকল্পনা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও ক্রেমলিন সেই অভিযোগ প্রথম থেকে অস্বীকার করে আসছে।
কিন্তু মস্কো অস্বীকার করলেও সীমান্তে তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত ইউক্রেন। তাই ইউক্রেনসহ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে রুশ হামলা মোকাবিলা করতে। সীমান্তে দায়িত্বরত ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তা মিকোলা ফেরিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক প্রহরায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, বিশেষ করে রিজার্ভ ফোর্সের সদস্যদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো কারণে রাশিয়া হামলা চালায়, তবে রুশ সেনাদের প্রথম মোকাবিলা করতে হবে আমাদের।’
ফেরিন যখন কথা বলছিলেন, তখন তিনি সীমান্তে একটি পর্যবেক্ষণ চৌকিতে ছিলেন। এই চৌকি থেকে ভিডিও সার্ভিলেন্স–ব্যবস্থা ব্যবহার করে ১০ কিলোমিটার দূরের ঘটনাও পর্যবেক্ষণ করা যায়।
ইউক্রেনের এই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। ২০১৫ সালে এই বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এই সীমান্তে রক্ষীরা বাংকারে অবস্থান করছেন। শীত থেকে বাঁচতে তাঁদের বেশ কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।
রাশিয়ার ও ইউক্রেন সীমান্তের একটি এলাকা গোপতিভকা। রাশিয়ায় যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রুট এটি। এই সীমান্ত দিয়ে খুব কম গাড়িই ইউক্রেনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এই সীমান্ত এলাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের শহর খারকিভ। এই শহরের প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। এই শহরের মানুষ ইতিমধ্যেই রুশ হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাঁরা এই ধারণা করে জীবনযাপন শুরু করেছেন, যেকোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারে।