রুশ বাহিনীর অবস্থানের দিকে নিশানা স্থির করছেন ইউক্রেনের এক সেনা। গত শুক্রবার দেশটির পূর্বাঞ্চলে দোনেস্কের আভদিভকাতে
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সেভেরোদোনেৎস্কে কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের তীব্র লড়াই চলছে। গতকাল রোববার ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সেভেরোদোনেৎস্কের কাছের গ্রামগুলোতে রুশ সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ‘আমাদের ইউনিট তোশকিভকা এলাকায় হামলা প্রতিহত করেছে। সেখানে রুশ সেনারা পিছু হটেছে এবং পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। ওরিকোভ গ্রামের কাছেও রুশ সেনারা ঝোড়ো হামলা চালায়। তবে ইউক্রেনের সেনারা সেটিও সফলভাবে প্রতিহত করেছে।’

জেলেনস্কি

গত শনিবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করেন, সেভেরোদোনেৎস্কের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র লড়াই চলছে। এসব এলাকার অধিকাংশই এখন রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হাইদাই গতকাল টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে রুশ সেনাবাহিনী যেসব ঘোষণা দিচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা সেভেরোদোনেৎস্কের অধিকাংশ শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও এখনো পুরো এলাকা তাদের দখলে নিতে পারেনি।

কিয়েভকে দীর্ঘমেয়াদি সমর্থন দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
জেনস স্টলটেনবার্গ, ন্যাটো মহাসচিব

সেরহি হাইদাই আরও বলেন, রাশিয়ান বাহিনী প্রতিনিয়ত রিজার্ভ সেনা ব্যবহার করছে। সেভেরোদোনেৎস্ক ও আশপাশের এলাকায় নতুন সৈন্য নিয়ে আসছে। এখন তারা ক্রলিং কৌশল ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে তারা ধাপে ধাপে, মিটারের হিসাবে সামনে এগোচ্ছে।

ইউক্রেনের একটি জ্বালানি ডিপোতে রুশ বাহিনীর হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী। গতকাল দেশটির দিনিপ্রো এলাকায়
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ, সেভেরোদোনস্কের একটি নদীর ওপারে লিসিচানস্ক শহর থেকে জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ব্যাপক গোলাবর্ষণে শহরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে গত কয়েক দিনেও লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। লিসিচানস্কের সঙ্গে যোগাযোগকারী সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছেন রুশ সেনারা। রুশ সেনাদের বোমা হামলা থেকে বাঁচতে এখনো আজত রাসায়নিক কারখানার নিচে শত শত মানুষ লুকিয়ে রয়েছে। হাইদাই বলেন, ওই কারখানায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর নিষ্কাশন শোধনাগার ধ্বংস হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ এই সপ্তাহে সতর্ক করে বলেছে, সেভেরোদোনেৎস্কের নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি, খাবারের সংকট তৈরি হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের উত্তরে আবার হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, খারকিভের উত্তরাঞ্চলে বোমাবর্ষণ শুরু হয়েছে। মস্কোর পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গতকাল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে খারকিভের ট্যাংক মেরামতকারী কারখানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাইকোলাইভ শহরে পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা ২০টি সামরিক যান ও ১০টি হাউটজার ধ্বংস করা হয়েছে। রুশ বার্তা সংস্থা তাস বলেছে, মারিউপোল শহরের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা থেকে বন্দী করা ইউক্রেনের দুই শীর্ষ কমান্ডারকে রাশিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধ কয়েক বছর পর্যন্ত চলতে পারে: ন্যাটো

এদিকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ কয়েক বছর পর্যন্ত চলতে পারে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার কাছে দেশের পূর্বাঞ্চল তুলে দেবেন না তিনি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর প্রথমবারের মতো দেশটির পূর্বাঞ্চল মাইকোলাইভে যান জেলেনস্কি। সেখানে তিনি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

জেলেনস্কি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও ন্যাটো মহাসচিব সতর্ক করে বলেন, কিয়েভকে দীর্ঘমেয়াদি সমর্থন দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দ্বিতীয়বারের মতো কিয়েভ সফর শেষে সানডে টাইমস-এ কলাম লিখেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সেখানে তিনি লিখেছেন, সময় এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি ইউক্রেনের টিকে থাকার কৌশলগত সহনশীলতা এবং শেষ পর্যন্ত জয়লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানান।