‘অবৈধ’ লাউডস্পিকারমুক্ত হচ্ছে উত্তর প্রদেশ

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ

ঈদ ও অক্ষয় তৃতীয়া উদ্‌যাপনের আগে উত্তর প্রদেশ সরকার রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে ৫৩ হাজার ৯৪২টি ‘অবৈধ’ লাউডস্পিকার খুলে দিয়েছে। এ ছাড়া আইন মেনে আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে ৬০ হাজার ২৯৫টি লাউডস্পিকার। আজ রোববার সকাল সাতটা পর্যন্ত এই হিসাব জানিয়ে রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশান্ত কুমার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের কোথাও কোনো ধর্মস্থানে একটিও অবৈধ লাউডস্পিকার রাখা হবে না।

ধর্মস্থানে লাউডস্পিকারের ব্যবহার করতে হবে আইন মেনে। লাউডস্পিকার নিক্ষিপ্ত আওয়াজ অর্থাৎ ‘ডেসিবল’ নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখতে হবে।

এই বছর ঈদ ও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তিথি অক্ষয় তৃতীয়া সম্ভবত একই দিনে পড়তে চলেছে। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, সোম অথবা মঙ্গলবার ঈদ ও অক্ষয় তৃতীয়া উদ্‌যাপনের আগেই রাজ্যকে অবৈধ লাউডস্পিকার মুক্ত করা হবে।

হিজাব, হালাল ও আজান বিতর্ক শুরু হওয়ার পর ভারতের প্রধানত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে মসজিদ থেকে লাউডস্পিকার সরানোর এক আন্দোলন দানা বাঁধে। গত মাসের মাঝামাঝি মহারাষ্ট্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) নেতা রাজ ঠাকরে ৩ মের মধ্যে সব মসজিদ থেকে লাউডস্পিকার খুলে ফেলার সময়সীমা বেঁধে দেন। এই হুমকিতে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেয় বিজেপি। আজানের বিরুদ্ধাচরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে এমএনএস হনুমান চালিশা পাঠের কর্মসূচিও গ্রহণ করে। এই দাবির মুখে মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ বালসে পাটিল সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে কি না, কেন্দ্রীয় সরকার আইন এনে তা ঠিক করুক। রাজ্য সরকার এটুকু নিশ্চিত করতে পারে যে কোনো ধর্মস্থানে অবৈধভাবে ও বিনা অনুমতিতে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। সর্বভারতীয় আইনসংক্রান্ত মহারাষ্ট্র সরকারের দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখনো অবশ্য কোনো মন্তব্য করেনি।

আজান ও লাউডস্পিকার নিয়ে এই বিতর্ক দানা বাঁধার মুখে গত ২৪ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নির্দেশ দেন, রাজ্যের কোনো ধর্মস্থানে অবৈধ লাউডস্পিকার রাখা যাবে না। লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে আইন মেনে, নিক্ষিপ্ত আওয়াজ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। শব্দদূষণ রুখতে স্বরক্ষেপণের তীব্রতা বেঁধে দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে আইন এনেছিল। বৈধ এবং অনুমতি নেওয়া লাউডস্পিকারের ‘ডেসিবল’ মাত্রা তার মধ্যে রাখার নতুন নির্দেশ জারি হয়েছে। সমস্ত ধর্মস্থান কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ মানতে অনুরোধ করে রাজ্য প্রশাসন তাদের সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে। বহু ধর্মস্থান স্বেচ্ছায় অবৈধ লাউডস্পিকার খুলে দিয়েছে বলেও পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন।

হিজাব, হালাল ও আজান বিতর্ক নিয়ে ভারতের রাজনীতি সরগরম। এরই মধ্যে বিজেপিশাসিত রাজ্যে উচ্ছেদ হটাতে শুরু হয়েছে বুলডোজারের ব্যবহার। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধীপক্ষের তরজা চরমে।