আসামের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির মহাসচিব সাধন পুরকায়স্থ
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির মধ্যেই ভারতের আসাম রাজ্যের বাঙালি হিন্দু-মুসলমানরা ‘সন্দেহভাজন’ তকমা লাগানো নোটিশ পাচ্ছেন। আসামে গঠিত ‘বিদেশি ট্রাইব্যুনাল’ থেকে নোটিশ পাঠানো শুরু করেছে। এতে আসামের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির (সিআরপিসি) মহাসচিব সাধন পুরকায়স্থ বলেছেন, এই করোনা মহামারির মধ্যে এই ধরনের নোটিশ পাঠানো চরম অমানবিকতার শামিল। বাঙালিদের নোটিশের পরিবর্তে বিষ দেওয়া হোক।

সিআরপিসি নতুন করে দাবি তুলেছে, অবিলম্বে এটি বন্ধ করা হোক। সুরক্ষা সমিতি থেকে ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের কাছে নোটিশ পাঠানো বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এভাবে বিদেশি তকমা লাগিয়ে এই রাজ্যের বাঙালিদের বিতাড়ন করতে পারবে না আসামের বিজেপি সরকার। এর বিরুদ্ধে বাঙালিদের আন্দোলন জারি রয়েছে রাজ্যজুড়ে। আসাম সরকার তাঁদের দাবি না মানলে তাঁরা রাজ্যজুড়ে আবার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

সিআরপিসির মহাসচিব সাধন পুরকায়স্থ আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেছেন, ভোটার কার্ড, পরিচয়পত্র, আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও এভাবে বাঙালিদের ভারতীয় রাজ্য থেকে বিতাড়নের চক্রান্ত করা হচ্ছে। এই চক্রান্ত রুখবেন এই রাজ্যের বাঙালিরা।

সাধন পুরকায়স্থ বলেন, রাজ্য সরকার এমন সময় নোটিশ পাঠানো শুরু করেছে, যখন করোনার কারণে রাজ্যের মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন, যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ বের হতে পারছেন না। এ অবস্থায় কীভাবে দূরদূরান্তের মানুষ ট্রাইব্যুনালে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হবেন? অথচ তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের সপক্ষে যাবতীয় প্রমাণপত্র রয়েছে। আর ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে না পারলে একতরফাভাবে এই বাঙালিদের’ বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে রায় দিচ্ছেন ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ৩১ আগস্ট আসামে এনআরসির (জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন) চূড়ান্ত তালিকায় বাদ দেওয়া হয় ১৯ লক্ষাধিক বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের নাম। আর এটাই মেনে নিতে পারেননি আসামে যুগ যুগ ধরে বসবাস করা বাঙালিরা। তাঁরা আসামের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।

সাধন পুরকায়স্থ আরও দাবি করেন, আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারতীয় রাজ্যে প্রত্যেক বাঙালির ন্যায্য নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। হিন্দির আগ্রাসন রুখতে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। তিনি এ কথাও বলেন, এখনো আসামের ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী রয়েছেন বহু বাঙালি। ইতিমধ্যে ওই সব ডিটেনশন ক্যাম্পে মারাও গেছেন ৩০ জন।

এ প্রসঙ্গে সাধন পুরকায়স্থ বলেছেন, ‘রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষকে “বিদেশি” বানিয়ে হত্যা করছে। আসাম এখন হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক বধ্যভূমি। আমরা চাই বিদেশি ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশের পরিবর্তে বিষ দিক, যা খেয়ে বাঙালিরা মরতে পারে।’