কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তিনিও মমতাকে সংবর্ধনা দিতেন: চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা আকাদেমির সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার ঘটনায় রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এর মাধ্যমে সরকারি ক্ষমতা গুরুতর অপব্যবহার হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী শুভাপ্রসন্ন মমতার পুরস্কার পাওয়ার ঘটনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তিনিও মমতাকে সংবর্ধনা দিতেন। তবে শুভাপ্রসন্নের এ বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগেমধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রবর্তিত সাহিত্যে সাহিত্য পুরস্কার পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এই পদক দেওয়া হয়। মমতার এই পদক পাওয়ার পর রাজ্যজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
গতকাল বুধবার কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একাংশ একটি খোলা চিঠি দিয়ে এই পদকপ্রাপ্তির কড়া সমালোচনা করেছেন। খোলা চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের সম্পত্তি। জনসাধারণের কাছে সরকার দায়বদ্ধ আকাদেমির কার্যকলাপ পরিচালনার বিষয়ে। মুখ্যমন্ত্রীকে যেভাবে পুরস্কার দেওয়া হলো তাতে সরকারি ক্ষমতার গুরুতর অপব্যবহার করা হয়েছে। আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যকে চূড়ান্ত অসম্মান করা হয়েছে এবং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে।’
খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, মালিনী ভট্টাচার্য, মিহির ভট্টাচার্য, আজিজুল হক, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, কুন্তল মুখোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিশিষ্টজনেরা।
খোলা চিঠিতে তাঁরা দাবি করেছেন, যে বিচারকমণ্ডলী বা জুরিবোর্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই পুরস্কার দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন, সেই জুরিবোর্ডের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হোক। তাঁদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হোক।
বাংলা আকাদেমির সভাপতি ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য সাফাই গেয়েছেন এ পুরস্কার দেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র বাঙালিদের একটা অংশ এমন হতে পারে! তাই বলতে ইচ্ছে করছে, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করেনি। অবাঙালিরা এমন করতেন না।’
আবার গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘পৃথিবীর সব পুরস্কার নিয়েই বিতর্ক হয়েছে। কোনো পুরস্কারই অবিতর্কিত নয়। এমনকি প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বব ডিলানের নোবেল পুরস্কার নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। আর পদত্যাগের ঘটনা নোবেল পুরস্কার নিয়েও হয়েছে। নোবেল পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথও কথা শুনেছিলেন। ’
অন্যদিকে গতকালই কলকাতার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন পুরস্কার দেওয়ার প্রশংসা করেছেন। শুভাপ্রসন্ন মমতার ছবির একজন অনুরাগী হিসেবে রাজ্যজুড়ে পরিচিত। তাই মমতার এই পদক প্রাপ্তির ঘটনার পর চারদিকে ওঠা বিতর্কের মাঝে তিনি একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ থাকলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এসে মমতাকে সংবর্ধনা দিতেন। রবীন্দ্রনাথ এঁদের মতো ঈর্ষাকাতর ছিলেন না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদে এর আগে বাংলা আকাদেমি থেকে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দেন লেখিকা ও গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনেই কবিতাকেই অসম্মান করা হয়েছে। ছোটবেলা থেকে কবিগুরুকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছি। তাঁর কবিতা আমার কাছে দুর্মূল্য; সেই কবির জন্মদিনে এই পুরস্কারকে মেনে নেওয়া যায় না। এটা কার্যত কবিতাকেই অপমান করা। তারই প্রতিবাদে আমি আমার পদক ফিরিয়ে দিয়েছি।’
অন্যদিকে বাংলা একাডেমির উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক ও ভাষাবিদ অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস।