কারাগারে যেভাবে কাটবে সিধুর সময়

বিধানসভা নির্বাচনে দল হেরে যাওয়ায় সম্প্রতি নভজ্যোৎ সিং সিধু পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন
ফাইল ছবি

তিন দশক পুরোনো অনিচ্ছাকৃত খুনের একটি মামলায় এক বছরের সাজা হয়েছে কংগ্রেস নেতা ও ভারতের জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিং সিধুর। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আত্মসমর্পণ করেন তিনি। সিধু এখন ২৪১৩৮৩ নম্বর কয়েদি। আছেন পাঞ্জাবের পাটিয়ালা কারাগারের ৭ নম্বর ব্যারাকে। খবর এনডিটিভির।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের ২৪ ঘণ্টা পর পাটিয়ালার একটি আদালতে শুক্রবার আত্মসমর্পণ করেন সিধু। বিকেল ৪টার কিছুক্ষণ পর আত্মসমর্পণ করলে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশের একটি গাড়িতে করে ৫৮ বছর বয়সী এই কংগ্রেস নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে।

একই কারাগারে আছেন সিধুর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাবশালী কয়েদি বিক্রম সিং মাজিথিয়া। তিনি শিরোমনি আকলি দলের নেতা। বিক্রম মাজিথিয়া মাদকসংক্রান্ত মামলায় কারাগারে আছেন। ফেব্রুয়ারি-মার্চের বিধানসভা নির্বাচনে অমরিতসর পূর্ব আসন থেকে দুজনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে উভয়ই আম আদমি পার্টির জীবনজ্যোৎ কাউরের কাছে হেরে যান।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া সিধুকে গত বৃহস্পতিবার এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিধানসভা নির্বাচনে দল হেরে যাওয়ায় সম্প্রতি তিনি পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এখন কারাজীবন শুরু হচ্ছে পাঞ্জাবের এই নেতার।

আরও পড়ুন

কারাজীবনের প্রাত্যহিক রুটিন

সকাল ৫টা ৩০ মিনিট: কয়েদিদের দিনটা সকাল সকালই শুরু হয়।
সকাল ৭টা: চায়ের পাশাপাশি বিস্কুট ও ছোলা দেওয়া হয়।

সকাল ৮টা ৩০ মিনিট: সকাল ও দুপুরের খাবার একসঙ্গে। ছয়টি পাতলা রুটি, ডাল-সবজি। এরপর কাজের জন্য বের হওয়া।

বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট: দণ্ডপ্রাপ্তরা বিভাগ অনুযায়ী বরাদ্দকৃত কাজ শেষ করেন।
সন্ধ্যা ৬টা: রাতের খাবার। ছয়টি পাতলা রুটি, ডাল-সবজি।
সন্ধ্যা ৭টা: কয়েদিদের তাঁদের ব্যারাকে আটকে রাখা হয়।

কয়েদিদের আয়

কয়েদিরা দিনে ৩০ থেকে ৯০ রুপি আয় করে থাকেন। প্রথম তিন মাস কোনো ধরনের মজুরি ছাড়া দণ্ডিতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অদক্ষ, আধাদক্ষ ও দক্ষ কয়েদি হিসেবে ভাগ করার পর তারা দিনে ৩০ থেকে ৯০ রুপি পর্যন্ত আয় করতে পারেন। দণ্ডিত অপরাধীরা দিনে আট ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। তাঁদের মজুরি সরকার বহন করে।

পোশাকে পরিধানের ক্ষেত্রে বিশেষ পছন্দের জন্য পরিচিত সিধুকে কারাগারে এখন শুধু সাদা পোশাক পরেই থাকতে হবে।

সিধুর বিরুদ্ধে করা মামলাটি ১৯৮৮ সালের। সে বছর ২৭ ডিসেম্বর রাতে পাঞ্জাবের পাটিয়ালায় গাড়ি পার্কিং নিয়ে গুরনাম সিং নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে সিধু ও তাঁর বন্ধুর বচসা হয়। এর একপর্যায়ে হাতাহাতিতে ওই বৃদ্ধ আহত হন ও পরে মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। গুরগামের মাথায় সিধু ঘুষি মারেন বলে এক সাক্ষী দাবি করেছেন।

ওই মামলায় নিম্ন আদালতে সিধু মুক্তি পান। পরে ২০০৬ সালে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের রায়ে অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। তিন বছরের সাজা হয়। পরের বছর সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন সিধু।

এরপর ২০১৮ সালে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট। অস্ত্র ব্যবহার না করায় সাজা বাতিল করা হয় এবং সিধুকে জরিমানা দিতে বলা হয়। কিন্তু রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন গুরনাম সিংয়ের পরিবার। গঠন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ বেঞ্চ। তাতে সিধুকে এক বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হলো।