কাশ্মীরের ভোট নিয়ে তৎপরতা

জম্মু-কাশ্মীরের জেলা উন্নয়ন পর্ষদের (ডিডিসি) নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। গত নভেম্বরে বাদগাম জেলার শামসাবাদের একটি ভোটকেন্দ্রে
এএফপির ফাইল ছবি

জম্মু-কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুরোপুরি ফেরানোর তাগিদে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে। এ বিষয়ে এখনো সরকারি স্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও সাত দলের জোট গুপকর অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তেমন আলোচনা শুরু হলে তারা অংশগ্রহণে প্রস্তুত।

জম্মু-কাশ্মীরে তিন বছরের বেশি রাষ্ট্রপতির শাসন জারি রয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে মেহবুবা মুফতির সঙ্গ ছেড়ে বিজেপি জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসে। এক বছর পর ২০১৯ সালের আগস্টে রাজ্যের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খারিজ করে দেওয়া হয়। রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করার পাশাপাশি বাতিল হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। পূর্ণাঙ্গ রাজ্য সেই থেকে হয়ে যায় দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। একটি জম্মু-কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ।

সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে এনডিটিভি আজ রোববার এ খবর দিয়ে জানায়, নির্বাচন করিয়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার শিগগির সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী।

গুপকর অ্যালায়েন্স জোটের চেয়ারম্যান ফারুক আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তাঁরা আলোচনা প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রস্তুত। গত বুধবার এ বিষয়ে কথা বলতে তিনি পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে তাঁর কথা হয়।

গত তিন বছরের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তৈরি বলতে হয়েছে শুধু স্থানীয় পঞ্চায়েত পর্যায়ের নির্বাচন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সেই ভোটে গুপকর জোট শতাধিক আসন জেতে। বিজেপি পেয়েছিল ৭৪ আসন। কংগ্রেস ২৭টি। জোট নেতারা সেই ভোটের ফলকে ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে গণরায় বলে অভিহিত করেছিলেন।

জম্মু-কাশ্মীর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। এখনো সেখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরার ঢালাও অনুমতি নেই। ক্ষেত্রবিশেষে নিষেধাজ্ঞাও জারি রয়েছে। ইন্টারনেট যোগাযোগ ক্ষীণ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনাও অব্যাহত। এ কারণে গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’ এক প্রতিবেদনে ভারতীয় গণতন্ত্রকে ‘আংশিক গণতন্ত্র’ বলে চিহ্নিত করেছিল। ভারত সরকার সেই প্রতিবেদনকে একপেশে বলে বর্ণনা করে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহযোগী পররাষ্ট্রসচিব ডিন টম্পসন এক আলোচনা সভায় ভারতের গণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সাব-কমিটির বৈঠকে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গণতন্ত্র নিয়ে ডিন টম্পসন বলেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হলেও বর্তমান সরকারের কিছু পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, যা গণতন্ত্রের জন্য মানানসই নয়। বেমানান সেই সব পদক্ষেপ তিনি চিহ্নিতও করেন। যেমন বাকস্বাধীনতা হরণ ও নিয়ন্ত্রণ, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের আটক করা, ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ।

ডিন টম্পসন বলেন, এসব বিষয়ে ও কাশ্মীর নিয়ে বাইডেন প্রশাসন ভারতের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছে। তিনি বলেন, কাশ্মীরে যাতে দ্রুত স্বাভাবিকতা ফেরানো হয়, ভোট গ্রহণ হয়, সে জন্য জোর দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।

সম্ভবত এ কারণেই কাশ্মীরে ভোট গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।