কে পাবে বিরোধীর মর্যাদা, কলকাতা পৌর ভোটে প্রশ্ন এটাই
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনগুলোর মধ্যে সম্ভবত বিধানসভা নির্বাচনের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কলকাতা পৌরসভার নির্বাচন। আগামী রোববার রাজ্যের সবচেয়ে সম্পদশালী শহর কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ড নিয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নানা কারণে কলকাতা পৌরসভা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের অর্থের বড় অংশই রয়েছে কলকাতায়।
ফলে কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে জয় লাভ করলে একজন জনপ্রতিনিধি এতটাই সম্পত্তি ও প্রভাব বাড়াতে পারেন, যা বিধানসভা নির্বাচনে জিতলেও হয়তো পাঁচ বছরে করা সম্ভব নয়।
অপর দিকে কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের পরে আগামী বছরেই এক শরও বেশি শহরাঞ্চল ও জেলা স্তরের পৌরসভায় নির্বাচন হবে। এ কারণে কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল সামান্য হলেও সেসব নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা।
এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল আসন বা ওয়ার্ড পেয়ে জিতবে। এরপর আগামী পাঁচ বছরের জন্য কলকাতা শহরে নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার কাজ করবে। নির্বাচনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত জেনেও এই নির্বাচনের দিকে সবার চোখ থাকবে নানা কারণে।
যেটি দেখার বিষয় সেটি হলো ২০১৫ সালে শেষবার যখন পৌরসভা নির্বাচন হয়েছিল, তখন তৃণমূল কংগ্রেস ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৪টি পেয়েছিল। তারা ভোট পেয়েছিল প্রায় ৫১ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে তৃণমূল ১১৪টির বেশি আসন পায় না কম পায়, সেটি দেখার বিষয়।
২০১৫ সালের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৭টি ওয়ার্ডে, পেয়েছিল ১৫ শতাংশ ভোট। সে সময়ে বিধানসভায় রাজ্য বিজেপির আসন ছিল শূন্য এবং ভোটের হার মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপির আসন ৭০ (তারা জিতেছিল ৭৭ আসনে) এবং ভোট ৩৮ শতাংশ।
এই অবস্থায় পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপি কী ধরনের ফল আশা করছে, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজ্য বিজেপির এক নেতাকে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘ফল বিধানসভার তুলনায় খারাপ হবে, এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে গত পৌরসভায় পাওয়া ৭টির বেশি আসন অবশ্যই পাব।’ বিধানসভার মতোই কলকাতা পৌরসভাতেও বিজেপি প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাবে, এমন আশা বিজেপি নেতার।
এবার একটু অন্য দলগুলোর প্রসঙ্গে আসা যাক। পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্টসহ (সিপিআইএম) বাম ফ্রন্টের বিষয়টি সম্ভবত সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক। ২০১৫ সালে তাঁরা কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে সাড়ে ২৪ শতাংশ ভোট ও ১৫টি ওয়ার্ড জিতেছিল। রাজ্য বিধানসভা ও কলকাতা পৌরসভায় তখন প্রধান বিরোধী দল ছিল বামপন্থীরা।
কিন্তু এখন বামপন্থীদের শক্তি অনেক কম। বিধানসভায় তাঁদের আসন শূন্য এবং ভোট ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সম্প্রতি বিধানসভার উপনির্বাচনে তাঁদের ভোটের হার খানিকটা বেড়েছে। এবারের কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে সিপিআইএম তাদের পুরোনো বামপন্থী শরিকদের সঙ্গে নিয়ে লড়ছে।
পৌরসভা নির্বাচনের আগে সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্য তাঁদের অবস্থান নিয়ে ব্যাখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, পৌরসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসেবেই সামনে আসবেন তাঁরা।
সিপিআইএম নেতা আরও বলেন, ‘যাঁরা বিধানসভায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরা আবার ফিরে আসছেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, ২০১৫-এর পৌরসভায় পাওয়া ১৫টি আসন হয়তো আমরা ধরে রাখতে পারব না। কিন্তু বিধানসভায় আমাদের ভোটের হার যা ছিল, তা অনেকটাই বাড়বে। এ ছাড়া ওয়ার্ডের সংখ্যাও বিজেপির ওপরে চলে যাবে। বিজেপি তাদের ভোট ধরে রাখতে পারবে না।’
২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পাঁচটি ওয়ার্ডে জিতেছিল। এবারের নির্বাচনে তারা সেটি ধরে রাখতে পারলে, সেটি হবে বিস্ময়। ২০২১ সালের কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে তাই এটা প্রশ্ন নয় যে কে জিতবে, প্রশ্ন এটাই যে প্রধান বিরোধী দল কে হবে—বিজেপি না বাম ফ্রন্ট।