চরণজিৎ সিং চান্নি

প্রত্যাশামতো চরণজিৎ সিং চান্নির ওপরই ভরসা রাখল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব। গতকাল রোববার পাঞ্জাবে গিয়েই রাহুল গান্ধী জানিয়ে দিলেন, ভোটে জিতলে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নিই নতুন সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। বিকেলে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় এক ভার্চ্যুয়াল জনসভায় এ কথা ঘোষণা করে রাহুল বলেন, ‘আপনারা চেয়েছিলেন ভোটের আগে দল মুখ্যমন্ত্রীর নাম জানাক। পাঞ্জাবের মানুষ তাঁদের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চরণজিৎ সিং চান্নিকেই বেছে নিয়েছেন। চান্নি আপনাদেরই পছন্দ। আমি ঘোষক মাত্র।’

ভোটের দুই সপ্তাহ আগে রাহুলের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তা ও জল্পনার অবসান ঘটল ঠিকই, তবে এই ঘোষণা কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলে দিল। মুখ্যমন্ত্রিত্বের অন্যতম প্রধান দাবিদার প্রদেশ সভাপতি নভজ্যোৎ সিং সিধু গত শনিবারও তাঁর দাবিতে অনড় ছিলেন। নেতৃত্বের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে বলেছিলেন, এমন একজনকে মুখ্যমন্ত্রী করা দরকার, যিনি অন্তত ৬০ জন বিধায়ককে জিতিয়ে আনতে পারবেন। পাঞ্জাব বিধানসভার মোট আসন ১১৭। সরকার গড়তে প্রয়োজন ৫৯ জনের সমর্থন।

লুধিয়ানায় পৌঁছেই রাহুল মুখ্যমন্ত্রী চান্নি, প্রদেশ সভাপতি সিধু, সাবেক প্রদেশ সভাপতি সুনীল জাখরসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখান থেকে ভার্চ্যুয়াল জনসভা মঞ্চে এসে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে চান্নির নাম ঘোষণা করেন। এর আগে তিনি একে একে প্রশংসা করেন জাখর, সিধু ও চান্নির। রাহুল বলেন, ‘সুনীল জাখরের রক্তে রয়েছে পাঞ্জাবের রাজনীতি। তাঁর মতো রাজ্যের রাজনীতি আর কেউ বোঝেন না।’ সিধু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪০ বছর আগে আমি প্রথম সিধুকে দেখেছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম ওঁর ক্ষমতা কতটা। ওঁর ধৈর্যের পরিচয় তখনই পেয়েছিলাম।’ চান্নি সম্পর্কে বলেন, ‘দারিদ্র্য কী, দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা চান্নি তা জানেন। চান্নি বিনয়ী। মানুষের সঙ্গে তিনি থাকেন। দরিদ্রের কষ্ট বোঝেন। নরেন্দ্র মোদি বা যোগী আদিত্যনাথেরা তা বোঝেন না; কারণ, তাঁরা মানুষের মধ্যে বাস করেন না।’ রাহুল বলেন, ‘পাঞ্জাবের মানুষ চান্নিকে বেছে নিয়েছেন। আমরা বাছিনি। আমি সংসদে বলেছিলাম, এই সরকার দুটি ভারত সৃষ্টি করেছে। একটি ধনীদের, অন্যটি গরিবদের। আমরা সেই দেশ চাই, যেখানে ওই ভাগাভাগি থাকবে না। চান্নি এমনই এক নেতা, যিনি দারিদ্র্য বোঝেন। দরিদ্রের ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভব করেন।’

পাঞ্জাবের মানুষদের ৩৩ শতাংশ তফসিল জাতিভুক্ত। চান্নি নিজেও সেই গোষ্ঠীর। দলিত। চান্নির আগে পাঞ্জাবের ইতিহাসে কখনো কোনো দলিত মুখ্যমন্ত্রী হননি। ৩৩ শতাংশের সমর্থন পেতে স্বাভাবিক কারণেই চরণজিৎ সিং চান্নির ওপরই কংগ্রেস বাজি ধরতে চাইছে। টেলি ভোটের ভিত্তিতেই বেছে নেওয়া হয়েছে চান্নিকে।

চান্নির বিরুদ্ধে অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। মাত্র দুই দিন আগে তাঁর ভাতিজাকে দুর্নীতির অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) গ্রেপ্তার করেছে। চান্নি যদিও বলেছেন, তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন।