ছিটমহলবাসীকে মমতার স্বস্তি উপহার
অবশেষে প্রস্তাবিত ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে সমর্থনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বৃহস্পতিবার কোচবিহারের দিনহাটা মহাকুমার ডাকুরহাটে সরকারি পর্যায়ে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা জানান।
মমতা জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সমর্থন করে। রাজ্য সরকার চায়, এই চুক্তি সম্পাদন হোক। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে এই সমর্থনের কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছি। আমরা চাই ছিটমহলের মানুষ ফিরে পাক তাদের মৌলিক অধিকার।’ তিনি ছিটমহলের পুনর্গঠন, ছিটমহলবাসীর পুনর্বাসনসহ তাদের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানান।
এর আগে ১৬২টি ছিটমহলের প্রতীক হিসেবে ১৬২টি গোলাপ দিয়ে মমতাকে শুভেচ্ছা জানান ছিটমহলবাসী। মমতাও প্রবীণ ১৪ জন ছিটমহলবাসীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংবর্ধনা দেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশ থেকে অনেক ছিটমহলবাসী এখানে আসবেন। তাঁদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এই লক্ষ্যে ছিটমহলবাসীর উন্নয়নের জন্য এখানে গড়তে হবে রাস্তাঘাট, বাজার, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল। আর এ কাজের খরচ কেন্দ্রকেই বহন করতে হবে।
মমতার সভাস্থল ডাকুরহাটের ১৭০ মিটার দূরেই ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশের ছিটমহল করলা অবস্থিত।
চুক্তি সইয়ে মমতার সম্মতি মেলায় ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আজকের রাজ্য সরকারের ঘোষণা ছিটমহলবাসীকে নতুনভাবে জীবনযাপনের এক পথের সন্ধান দিয়েছে। আমরা মনে করি, আমরা যে ১৯৯৪ সাল থেকে এই ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করেছিলাম, এবার সেই আন্দোলনের ফসল পেতে চলেছে ছিটমহলবাসী। আমরা খুশি। খুশি আমাদের ১৬২টি ছিটমহলের বাসিন্দারা।’
ভারত ও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা উভয় দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে সোচ্চার ছিল উভয় দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারতের সাবেক ইউপিএ সরকার এবং বর্তমান বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সময় এই চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে আপত্তি তোলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দিলেও এই চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়া মূলত মাঝপথে আটকে যায় মমতার বিরোধিতার কারণে।
কিন্তু হঠাৎ করেই রাজনৈতিক কারণে অবস্থান বদল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চুক্তির পক্ষে দাঁড়ান, দাঁড়ান ছিটমহলবাসীর পাশে। গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র কেন্দ্রীয় সরকারকে এক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা এই সমস্যার সমাধান চায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তবে পাশাপাশি এই বিনিময়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য ও সহযাগিতা চান।
ঘোষণার জন্য কোচবিহারকে বেছে নেওয়ার কারণ, ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আর সবগুলোই কোচবিহার জেলায়। আর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে রয়েছে ভারতের ১১১টি ছিটমহল।