টিকা নিয়ে অসুস্থতার ‘মিথ্যা’ অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে সেরামের ১০০ কোটি রুপির মামলা

করোনাভাইরাসের টিকার ট্রায়ালে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জানিয়ে পাঁচ কোটি রুপি দাবি করেছিলেন এক স্বেচ্ছাসেবক। এবার ৪০ বছর বয়সী সেই স্বেচ্ছাসেবকের দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা ১০০ কোটি রুপির মানহানি মামলা করল সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই)। এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সেরাম ইনস্টিটিউটকে ইতিমধ্যে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, সেরামের উৎপাদিত ‘কোভিশিল্ড’ টিকা নেওয়ার পরে তাঁর স্নায়ুতন্ত্র প্রায় সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। আচরণগত নানা পরিবর্তন আসে। এ কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি পাঁচ কোটি রুপি সেরামের কাছে দাবি করেন। এ ছাড়া অবিলম্বে টিকার ট্রায়াল বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

২১ নভেম্বর এক নোটিশে তিনি এ দাবি করেন। এরপর ওই স্বেচ্ছাসেবকের দাবি ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে ১০০ কোটি রুপির মামলা করল সেরাম। নোটিশের অভিযোগগুলো বিপজ্জনক ও ভ্রান্ত ধারণাভিত্তিক বলেছে সেরাম। টিকার ট্রায়ালের সঙ্গে তাঁর স্বাস্থ্য সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি সেরামের।

সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নোটিশে বিবৃত অভিযোগগুলো বিপজ্জনক ও ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে করা। স্বেচ্ছাসেবকের স্বাস্থ্যজনিত পরিস্থিতির প্রতি পূর্ণ সমবেদনা রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের। কিন্তু ভ্যাকসিন ট্রায়ালের সঙ্গে তাঁর স্বাস্থ্য সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। ওই স্বেচ্ছাসেবী তাঁর স্বাস্থ্য সংকটের জন্য কোভিডের টিকার ট্রায়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপ করেছেন।’

ছবি : সংগৃহীত

সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার মুখপাত্র জানান, ওই স্বেচ্ছাসেবককে বিশেষভাবে মেডিকেল টিম জানিয়েছিল যে তাঁর সমস্যার সঙ্গে টিকার ট্রায়ালের কোনো সংযোগ নেই। তা সত্ত্বেও তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ জানিয়ে সংস্থার বদনাম করার চেষ্টা করেছেন। সংস্থার সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগের পেছনে অন্য পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট মানহানির মামলা দায়ের করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০০ কোটি রুপির বেশি দাবি করবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে আইসিএমআর। ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ওই স্বেচ্ছাসেবক গত ১ অক্টোবর টিকা দেওয়া হয় তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের শ্রীরামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ কেন্দ্রে।

সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াকে পাঠানো আইনি নোটিশে করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ নয় বলে জানিয়ে ওই ব্যক্তি অবিলম্বে ট্রায়াল বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আবেদন গ্রাহ্য না হলে তিনি সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। তাঁর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, শরীরে কোভিশিল্ডের ডোজ প্রবেশ করার পরই তিনি নানা উপসর্গে আক্রান্ত হন। এর জেরে মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে। তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, টিকা নেওয়ার কারণেই তাঁর শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

২১ নভেম্বর ওই ব্যক্তি আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে তিনি উল্লেখ করেন, টিকা নেওয়ার ১০ দিন পর গুরুতর মাথাব্যথা হয়, আচরণগত পরিবর্তন আসে, শব্দ এবং আলোয় সমস্যা হয়। এ ঘটনার জেরে তিনি রামচন্দ্র ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধেও আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। তবে রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট ওই ব্যক্তির অভিযোগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে পিটিআইয়ের খবরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) এবং রামচন্দ্র ইনস্টিটিউটের একটি নৈতিকতা কমিটি ওই ব্যক্তির অভিযোগ তদন্ত করবে।