তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী তিস্তা শীতলবাদকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আজ সোমবার প্রতিবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বড় আকারে প্রতিবাদ হয়েছে কলকাতা, দিল্লি ও দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে।
কলকাতায় বামপন্থী দলগুলো মূলত এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। প্রতিবাদে শামিল হয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো। দিল্লিতেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বামপন্থী দল তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেছে।
দুই দশক ধরে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার বিরোধিতা করে লেখালেখি করেছেন তিস্তা। ওই দাঙ্গায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের হয়ে মামলায়ও লড়েছেন তিনি। তাঁকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করে গুজরাট পুলিশ।
আজকের বিক্ষোভে কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে একটি বড় জমায়াতের নেতৃত্ব দেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্ট (সিপিআইএম) দলের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘তিস্তা বহু বছর ধরে মুম্বাই বা গুজরাট দাঙ্গায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়ে সত্যকে সামনে আনছেন। এর জন্য তাঁকে নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই যে বিশেষ তদন্তকারী দল বা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠিত হচ্ছে, এখন এর কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া।’
রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন মুহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, আজ এই ইস্যুতে এখানে যে এত মানুষ একত্র হয়েছে, তা এটাই প্রমাণ করে যে প্রতিবাদের প্রয়োজনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।
সিপিআইএম-এমএল (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট) দলের পক্ষ থেকে রাজ্য কমিটির সদস্য বাসুদেব বসু বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরে এখন মানবাধিকারকর্মীসহ সব বিরোধী দলের ওপরে চূড়ান্ত আক্রমণে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
এই রাজনীতিক বলেন, কোথাও কোনো চাকরি নেই। চাকরি দিতে পারছে না বিজেপি।
ফলে হাস্যকর এক অগ্নিপথ প্রকল্প সামনে এনে ছাত্র-যুবকদের যাবতীয় অধিকার হরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা শীতলবাদের মতো মানবাধিকারকর্মীর ওপরে হামলা হচ্ছে, মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে, যাতে প্রকৃত ইস্যু কখনো মানুষের সামনে না আসে।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্র শাখাও আজ কলকাতাসহ অন্যান্য জায়গায় বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুত্তলিকা পোড়ায়।
এদিকে তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেপ্তারে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকেই গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন। জাতিসংঘের তরফ থেকে সংস্থাটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন।
তবে তিস্তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে ভারতের বহু লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তিস্তাকে অনেক আগেই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকে।