পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের সময়ই বেড়েছে সংক্রমণ

কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে করোনা রোগী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিল মাসের প্রথম দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। গতকাল সোমবার সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে। এ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন শুরুর পর থেকেই করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। এখন পরিস্থিত এমন যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মিলছে না শয্যা। অভাব দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ২৭ মার্চ থেকে। আট দফার নির্বাচনের সপ্তম দফা শেষ হয়েছে গতকাল। আগামী বৃহস্পতিবার চার জেলার ৩৫টি আসনে অষ্টম বা শেষ দফার ভোট হবে। আর ফলাফল ঘোষণা করা হবে আগামী ২ মে একযোগে পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচ রাজ্যে।

করোনার এই সংক্রমণ নিয়ে একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচনের দিন এই রাজ্যে সংক্রমণের হার ছিল ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২।

দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ১ এপ্রিল সেই সংক্রমণ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশে। মৃত মানুষের সংখ্যা না বেড়ে থাকে ২ জনই।

পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ আর মৃত মানুষে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় একধাপে ৩৪।

ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের দিন ২২ এপ্রিল সেই সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মৃত মানুষের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬।

আর গতকাল সপ্তম দফার ভোটের দিন সেই সংক্রমণ হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর মৃত মানুষের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮–তে।

রাজ্যে করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। একদল কালোবাজারি ব্যবসায়ী অক্সিজেন মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও গতকাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার অক্সিজেন–সংকট মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। অক্সিজেন তৈরির জন্য প্রতিটি জেলায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতে এখন প্রতিদিন অক্সিজেনের চাহিদা আট হাজার মেট্রিক টনের। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ৭ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন। ভারত সরকার গতকালই ঘোষণা দিয়েছে, ভারতের সংক্রমিত এলাকার প্রতিটি জেলায় তৈরি করা হচ্ছে অক্সিজেন প্ল্যান্ট। এ জন্য দেশে নতুন করে আরও ৫৫১টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট শিগগিরই তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কলকাতাসহ এই রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যার তীব্র অভাব রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে শয্যা নেই বললেই চলে।

করোনা ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চলমান বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী চার প্রার্থীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গতকাল মালদহের বৈষ্ণবনগর আসনের নির্দল প্রার্থী ও আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সমীর ঘোষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর আগে গত রোববার প্রাণ হারান উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা।

গতকাল রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানিয়ে দেওয়া হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ১৫ হাজার ৯৯২ জন। মারা গেছেন ৬৮ জন। সব মিলিয়ে এখন এই রাজ্যে আক্রান্ত হলো ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪২ জন। মারা গেছেন ১১ হাজার ৯ জন। মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছে কলকাতার ২৬ জন আর উত্তর ২৪ পরগনার ১১ জন। কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৩ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ জন।