পাঞ্জাবে স্কুল খুলছে, অন্য রাজ্যে বাড়ছে সংক্রমণ
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কার মধ্যেই ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কংগ্রেস সরকার রাজ্যের সব স্কুল খোলার নির্দেশ জারি করল। আজ শনিবার দেওয়া সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সোমবার থেকে রাজ্যের সব স্কুল খুলে দেওয়া হচ্ছে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোভিড নিয়মনীতি মেনে ক্লাস শুরু হবে।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর গত বছরের মার্চ মাসে ভারতজুড়ে বিধিনিষেধের সময় থেকে সব রাজ্যের স্কুল বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে তৃতীয় ঢেউয়ের উঁকিঝুঁকি নিয়ে জল্পনা ও আশঙ্কাও শুরু হয়েছে। সেই সময়ে পাঞ্জাব সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুবই সাহসী। আগামী বছর এই রাজ্যের বিধানসভার ভোট।
এই মুহূর্তে পাঞ্জাবে করোনার প্রকোপ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে। শুক্রবার রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৪৯ জন। জনজীবন স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এত দিন বন্ধই ছিল। কোনো রাজ্য সরকারই স্কুল খোলার মতো ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নয়।
অথচ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা নিয়ে চাপ বাড়ছে। এই অবস্থায় পাঞ্জাব সরকারের এই সিদ্ধান্ত অন্য রাজ্যকেও উৎসাহিত করে তুলতে পারে। তবে প্রতিটি স্কুলকে কঠোরভাবে কোভিড নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে বলে সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।
পাঞ্জাব সরকারের এই সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও দিল্লি সরকার স্কুল–কলেজ, কোচিং সেন্টারসহ সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নতুন নির্দেশ জারি করেছে। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোভিড–সম্পর্কিত বিভিন্ন কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা। পুরোনো নির্দেশ নতুন করে জারির পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় হুঁশিয়ারি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ ১০ রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ শনিবার উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক ডাকেন। তারপরই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়। সেই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চের মহাপরিচালক বলরাম ভার্গব।
সেই বৈঠকে প্রধানত ১০ রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। ওই রাজ্যগুলো হচ্ছে কেরালা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, ওডিশা, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়, অন্ধ্র প্রদেশ ও মণিপুর। দেখা গেছে, সারা দেশে সংক্রমণের সংখ্যা ও হার কমলেও এই রাজ্যগুলোতে সম্প্রতি নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। নতুন এই সংক্রমণকে ‘ডেলটা প্লাস’ বলা হচ্ছে।
এর মধ্যে গুটিবসন্তের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা গেছে। তৃতীয় ঢেউয়ের এই আশঙ্কার মোকাবিলায় কী কী করতে হবে, তা এই বৈঠকে আলোচিত হয়। রাজ্যগুলোর যেসব জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি, সেখানে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। টিকা দেওয়ার হারও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। নতুন সংক্রমণের চরিত্র বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও চিকিৎসক মহলকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেখা গেছে, এই রাজ্যগুলোর ৪৬টি জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের ওপর। ৫৩ জেলায় সেই হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ। দেশে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ৩০ হাজারের নিচে চলে এসেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে তা নিয়ম করে ৪০ হাজারের ওপরে থাকছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটা তৃতীয় ঢেউয়ের প্রাথমিক লক্ষণ। এ অবস্থায় পাঞ্জাব সরকারের স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে পারে।