বায়ুদূষণ যেভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে
বিশ্বে বায়ুদূষণে আজ বুধবার ঢাকার অবস্থান পঞ্চম। বৈশ্বিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ বায়ুমান সূচকে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ১৭৮। ২৪৮ স্কোর নিয়ে তালিকায় দূষণের শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। মাত্র এক দিন আগেই গত সোমবার শীর্ষ অবস্থান ছিল ঢাকার দখলে।
আইকিউ এয়ারের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী, ২০২০ সালের শীর্ষ ১০০ দূষিত শহরের মধ্যে ৪৬টিই ভারতের। এরপর ৪২টি শহর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের দূষিত শহরের সংখ্যা ছয়। আর ৪টি দূষিত শহর বা অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাতাসের মানের এই অবনতি মারাত্মক পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণের ক্ষতি এড়াতে নানা সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দূষণের জেরে শুধু ফুসফুসই নয়, ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
বায়ুদূষণের কারণে শরীরের ওপর কী কী প্রভাব পড়তে পারে, তার একটি তালিকা তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
ফুসফুস
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ শ্বাসপ্রশ্বাসে দূষিত বাতাস গ্রহণ করে থাকে। এ বাতাসে রয়েছে ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর সব গ্যাস ও অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা। দূষিত এ বাতাসের সংস্পর্শে এলে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানি, এমনকি বুকব্যথাও।
হৃৎপিণ্ড
বিশ্বে প্রতিবছর মানুষের মৃত্যুর বড় একটি কারণ হৃদ্রোগ। এ তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনারি ধমনি বন্ধের সঙ্গে বায়ুদূষণের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। করোনারি ধমনির মাধ্যমেই হৃৎপিণ্ডে রক্ত, অক্সিজেনসহ নানা পুষ্টি উপাদান সরবরাহ হয়।
দূষিত বাতাসের মধ্যে শ্বাস নিলে ক্ষতিকর কণাগুলো রক্ত শোষণ করে নেয়। এরপর সেগুলো রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কণাগুলোকে ব্যাকটেরিয়া হিসেবে শনাক্ত করে। এর প্রতিক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ডের ধমনিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, দুর্বল হয়ে পড়ে পেশি। এসবের জেরে হৃদ্রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে।
মস্তিষ্ক
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রোকসহ মস্তিষ্কের নানা সমস্যার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে বায়ুদূষণের। এমনকি মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর বায়ুদূষণ মারাত্মক আকারে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে। গবেষকদের দাবি, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ শিশুদের বোধক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে। দুর্বল করে দিতে পারে প্রাপ্তবয়স্কদের বোধশক্তি। পাশাপাশি বিষণ্নতার একটি কারণও হয়ে উঠতে পারে বায়ুদূষণ।
ত্বক
বায়ুদূষণের কারণে ক্ষতি হতে পারে ত্বকেরও। দূষিত কণা প্রথম সংস্পর্শে আসে ত্বকের। এর জেরে শিশুরা নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়।
চোখ
বায়ুদূষণের ক্ষতির ঝুঁকি থেকে বাদ পড়ে না চোখও। তবে লোকভেদে এ ক্ষতির উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। অনেকেই আবার চোখে শুষ্কতা, অস্বস্তি ও ব্যথার মতো নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারে। ওজোন ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের সংস্পর্শে এলেও চোখের ব্যথা দেখা দিতে পারে। কন্টাক্ট লেন্সও ডেকে আনতে পারে একই ধরনের জটিলতা।