বিজেপির আরও এক এমপি ফিরলেন তৃণমূলে
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আরেক প্রভাবশালী এমপি অর্জুন সিং। আজ রোববার সন্ধ্যায় তাঁর পুরোনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে অর্জুন বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ দেখছে না, এ যুক্তিতেই তিনি তৃণমূলে ফিরেছেন।
অর্জুন সিংকে নিয়ে লোকসভায় মোট দুজন এমপি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। বাবুল সুপ্রিয় যোগ দেন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, আর ব্যারাকপুরের এমপি অর্জুন ফিরলেন আজ সন্ধ্যায়। এর ফলে ভারতের লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের এমপিসংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে হলো ২৪। বিজেপির এমপিসংখ্যা ১৮ থেকে কমে হলো ১৬। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভায় মোট আসন ৪২টি। বাবুল সুপ্রিয় লোকসভা থেকে পদত্যাগ করে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে অর্জুন সিং জানিয়েছেন, তিনি এখনই নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন না।
দলবদলের সিদ্ধান্ত জানানোর আগে আজ বিকেলে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্য কলকাতার অফিসে বৈঠক করেন অর্জুন। এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা অর্জুন সিংকে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিজেপি ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে অর্জুন বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর কেন্দ্রে ধীরে ধীরে সমস্ত পাটকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পাটের দাম কমে যাচ্ছে, শ্রমিক ও কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাটশিল্প ও পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের জন্যই তিনি তৃণমূলে এসেছেন।
অর্জুন বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পাটশিল্পকে বাঁচানোর আবেদন করেন। আমিও কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সাহায্য চাই। কিছু সাহায্য আসেও, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ধীরে ধীরে পাটশিল্প আরও রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। অথচ এই শিল্প ও পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ইতিবাচক কাজই করছে না।’
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন ফেসবুকের সংগঠনে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে অর্জুন বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন ফেসবুকের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমরা সংগঠনের মানুষ, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই কাজ করছি। বাম ফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। বিজেপিতে থেকে সাংগঠনিক মানুষ হিসেবে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল।’
লোকসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন বলেন, তৃণমূলের দুজন এমপি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন। তাঁরা যদি ইস্তফা দেন, তবে তিনিও এক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করবেন।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ওই দুই এমপি হলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপির বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পিতা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন শিশির অধিকারী। তাঁর ছেলে দিব্যেন্দু জিতেছিলেন তমলুক কেন্দ্র থেকে।
অর্জুন সিং পশ্চিমবঙ্গের বড়সংখ্যক বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষের নেতা। তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনে এই সম্প্রদায়ের বেশ কিছু ভোট যে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দলে ফিরবে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বিহার থেকে আসা অনেক শ্রমিক কাজ করেন। গত লোকসভা নির্বাচনে এ অঞ্চলে একাধিক আসন হারিয়েছিল তৃণমূল, যার অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচনের আগে অর্জুনকে তৃণমূলের লোকসভার প্রার্থী না করা। ফল, তিনি বিজেপিতে চলে যান ও নির্বাচনে জেতেন।
৩০ মে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে প্রচার শুরু করবেন অর্জুন। বলা যায়, তাঁর প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে কার্যত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস।