ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে নাম ঘোষণা করে ঋষি সুনাক বলেন, আমার কাছে পরিবার সবকিছু
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরকার ও নিজ দল টোরির (কনজারভেটিভ) চাপের কারণে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বরিসের উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ইতিমধ্যে অনেকেই তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেছেন। শুরু হয়েছে জল্পনা–কল্পনা।
বরিস জনসন সরে গেলে তাঁর জায়গা নিতে পারেন—এমন ব্যক্তির আলোচনায় আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদও। এর বাইরে বর্তমান মন্ত্রিসভা ও সাবেক মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যও আলোচনায় আছেন। এই দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করার পর থেকে বরিসের সরকার টালমাটাল হয়ে পড়ে।
এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার কনজারভেটিভ পার্টি থেকে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপরই গতকাল শুক্রবার দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক দলের প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
টুইটারে দেওয়া নির্বাচনী প্রচার ভিডিও বার্তায় ঋষি বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে কাউকে না কাউকে সময়টা ধরতে হবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ কারণেই আমি কনজারভেটিভ পার্টির পরবর্তী সভাপতি ও আপনাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হচ্ছি।’
সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর ঠাকুরদাদা ও ও ঠাকুমা ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলের। তাঁর স্ত্রীও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি প্রযুক্তি জায়ান্ট ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণা মূর্তির মেয়ে। ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনার সময় অক্ষতার সঙ্গে ঋষির পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে শুরু হওয়া প্রেম বিয়েতে গড়ায়।
ভিডিও বার্তায় ৪২ বছর বয়সী ঋষি তাঁর ঠাকুমার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘ঠাকুমা তরুণ বয়সে উন্নত জীবনের আশায় ইংল্যান্ডের বিমানে চেপে এখানে এসেছিলেন। ভালো চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের স্বামী ও সন্তানদের এখানে নিজের কাছে নিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ জমাতে তাঁর এক বছর লেগেছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমার কাছে পরিবারই সবকিছু।’
ঋষি বলেন, তাঁর ঠাকুমার সন্তানদের মধ্যে তাঁর মা উষা সুনাক একজন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে আসেন। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি ফার্মাসিস্ট হিসেবে নিজেকে পরিচিত করাতে পেরেছিলেন। তাঁর বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত যশবীর। বিয়ের পর তাঁর মা–বাবা সাউদাম্পটনে স্থায়ী হন। সেখানেই ১৯৮০ সালে ঋষির জন্ম হয়।
ঋষি আরও বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে এসেছি, কারণ আমি চাই এই দেশের প্রত্যেকের তাদের সন্তানকে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। আমাদের দেশ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এটি একটি প্রজন্মের জন্য গুরুতর বিষয়। এখন আমরা যে সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলো নির্ধারণ করবে ব্রিটিশ জনগণের পরবর্তী প্রজন্মেরও সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ থাকবে কি না। আমরা কি সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই মুহূর্তগুলো মোকাবিলা করব? এ কারণেই আমি কনজারভেটিভ পার্টির পরবর্তী সভাপতি ও আপনাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হচ্ছি। আমি এই দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে চাই।’
সাবেক এই অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় আমি সরকারের সবচেয়ে কঠিন বিভাগটি পরিচালনা করেছি। তাই আমার যোগ্যতা যুক্তিতর্কের বাইরে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক যদি কনজারভেটিভ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে দেশটির ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।