ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের চারধাম সড়ক নির্মাণে সায় সুপ্রিম কোর্টের

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: রয়টার্স

পেগাসাস মামলায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দোহাই কাজে আসেনি। কিন্তু উত্তরাখন্ড রাজ্যের ‘চারধাম’ প্রকল্প রূপায়ণে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কেন্দ্রের আরজি সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিলেন। পরিবেশসংক্রান্ত আপত্তি পুরোপুরি অগ্রাহ্য না করেও সর্বোচ্চ আদালত জানালেন, নিরাপত্তার স্বার্থে চারধাম প্রকল্পের জন্য পাহাড়ি রাস্তা ১০ মিটার চওড়া করা যাবে।

পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, এই প্রকল্প রূপায়িত হলে উত্তরাখন্ড রাজ্যে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে। ভূমিধস ঠেকানো যাবে না। বন্য প্রাণীর সংকট বেড়ে যাবে। নদীর গতিপথ বদলে যাবে। পরিবেশ বিপর্যয় অবধারিত।

হিমালয়ের পাশাপাশি সমতলও রসাতলে যাবে। পরিবেশকর্মীরাই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার জানান, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটি এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। তা অবহেলা করা যায় না।

তবে পরিবেশের প্রশ্নটিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা একেবারে উড়িয়ে দেননি। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ কে সিক্রির নেতৃত্বে এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি দেখবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে কি না। সুপ্রিম কোর্টের কাছে ওই কমিটি প্রতি মাসে একটি রিপোর্ট জমা দেবে।

চারধাম প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হিন্দুত্ববাদের প্রসারে তিনি ঠিক করেছিলেন, হিন্দুদের কাছে উত্তরাখন্ডের চার প্রধান তীর্থস্থান গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ ও বদ্রিধামের মধ্যে সংযোগকারী এক রাস্তা তৈরি করবেন। সেই রাস্তার দৈর্ঘ্য হবে ৮৯৯ কিলোমিটার, যাতে একই সঙ্গে চার ধাম দর্শন করা যায়। সমস্যা দেখা দেয় প্রস্তাবিত রাস্তার প্রস্থ নিয়ে। কেন্দ্র চায় ১০ মিটার প্রস্থ।

পরিবেশবিদদের আপত্তি তা নিয়ে। তাঁরা বলেন, ১০ মিটার চওড়া রাস্তা তৈরি করতে হলে হিমালয়ে অগুনতি গাছ কাটতে হবে। পাহাড় ভাঙতে হবে। বন্য প্রাণীর জীবন তাতে বিপন্ন হবে। নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে অবাঞ্ছিত জলাধার। ভূমিধসের কবলে বিপর্যস্ত হবে জনজীবন।

এ মামলায় কেন্দ্রের পক্ষে বলা হয়, এ রাস্তা তৈরি আরও জরুরি নিরাপত্তার স্বার্থে। পূর্ব লাদাখে চীনের মোকাবিলায় এ রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বোচ্চ আদালতকে কেন্দ্র বলে, ‘ব্রহ্ম’ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০ মিটার প্রস্থের রাস্তা প্রয়োজন। কারণ, ওই ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।

পেগাসাস প্রযুক্তির মাধ্যমে ফোনে কারচুপি–সম্পর্কিত তথ্য সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানাতে কেন্দ্র রাজি হয়নি নিরাপত্তার যুক্তিতে। সেই যুক্তি মানতে অস্বীকার করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি হিমা কোহলি। বলেছিলেন, সব সময় নিরাপত্তার দোহাই চলে না। মঙ্গলবার চারধাম মামলা শোনেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি বিক্রম নাথ। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার যুক্তি মানতে তাঁরা অবশ্য অরাজি হননি। যদিও আবেদনকারীদের দাবি, এলএসিতে ‘ব্রহ্ম’ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা চওড়া করার দাবি সেনাবাহিনী কখনো জানায়নি। ৮৯৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চারধাম প্রকল্পের রাস্তা তৈরিতে খরচ হবে ১২ হাজার কোটি রুপি। আগামী বছর উত্তরাখন্ডের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এই প্রকল্পকে বিজেপি তাদের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে।