ভারতের কেরালায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ফাঁসির আদেশ

পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর দায়ে ভারতের কেরালা রাজ্যে পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। এই মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার এই আদেশ দেন সিবিআই আদালতের বিশেষ বিচারক কে নাজির। সাজাপ্রাপ্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন কেরালা রাজ্যের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের ফোর্স থানার সহকারী উপপরিদর্শক কে জিথাকুমার ও সিভিল পুলিশ কর্মকর্তা ভি শ্রীকুমার। একই সঙ্গে তাঁদের দুই লাখ রুপি করে জরিমানা করা হয়েছে।

মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও শুনানি শেষে বিচারক কে নাজির বলেন, অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য নৃশংসভাবে ওই যুবককে হত্যা করেছেন। তাঁদের এই অন্যায়ে পুলিশ বিভাগের সুনাম নষ্ট হয়েছে। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনে বিরূপ ধারণা জন্মেছে। অথচ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার দায়বদ্ধতা ছিল পুলিশের।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থানীয় শ্রীকণ্ঠেশ্বরম পার্ক থেকে চুরির অভিযোগে পুলিশ ২৬ বছরের যুবক উদয় কুমারকে আটক করে। তাঁর বন্ধু সুরেশ কুমারকেও আটক করা হয়। পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫০০ রুপি উদ্ধার করে। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ওই টাকা চুরির টাকা।

থানায় নিয়ে তথ্য আদায়ে উদয় কুমারের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এতেও চুরির কথা স্বীকার করেননি উদয় কুমার। পরে থানাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনা প্রকাশিত হলে কেরালাজুড়ে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। ২০০৮ সালে উদয়ের মা প্রভাবতী দেবী (৬৭) কেরালা হাইকোর্টে এই হত্যার সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা করেন। হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের আদেশ দেন।

তদন্তে প্রমাণ হয়ে যায়, নির্যাতন চালিয়ে উদয় কুমারকে হত্যা করা হয়। ১৩ বছরের লড়াই শেষে গতকাল উদয়কুমারের মা প্রভাবতী দেবী ন্যায়বিচার পান।

আদালত এই মামলার নথি লোপাটের অভিযোগে আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেন। তাঁরা হলেন পুলিশ কর্মকর্তা টিকে হরিদাস, ইকে সাবু ও অজিত কুমার। হরিদাস বর্তমানে ডেপুটি পুলিশ সুপার এবং ইকে সাবু ও অজিত কুমার পুলিশ সুপার পদে বহাল রয়েছেন।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, রাজ্যের মানুষের স্বার্থে পুলিশকে আইনি চৌহদ্দির মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। ক্ষমতার লিপ্সা যেন তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করে না তোলে।