ভারতের লখিমপুরে গাড়িচাপায় কৃষক হত্যা পূর্বপরিকল্পিত
নিজের নির্বাচন কেন্দ্র বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের নতুন করিডর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও একবার উত্তর প্রদেশ দখলে রাখার স্বপ্নে বুঁদ। ঠিক এ সময়ে বিশেষ তদন্তকারী দল আদালতকে জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে গাড়িচাপা দিয়ে কৃষকদের হত্যা করার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিশেষ তদন্তকারী দলের নেতা বিদ্যারাম দিবাকর মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ওই ঘটনা কোনোভাবেই দুর্ঘটনা ছিল না। বরং তা রীতিমতো পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়েছে।
এই প্রতিবেদন পেশ করার পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই মামলায় হত্যা, গুরুতর আহত করা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ধারা নতুনভাবে যুক্ত করার অনুমতি চেয়েছেন।
বিশেষ তদন্তকারী দলের এই প্রতিবেদনের ফলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি ও তাঁর পুত্র আশিসের সমস্যা বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তদন্তকারী কর্মকর্তা ৩০৪ ধারায় ওই ঘটনার বিচারের বদলে ৩০৭ ধারা যুক্ত করতে চেয়েছেন।
ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ৩০৪ ধারায় বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে মৃত্যুর বিচার হয়। কিন্তু ৩০৭ ধারায় বিচার হয় খুনের চেষ্টার। আশিস এখনো জেলে বন্দী।
গত অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে লখিমপুর খেরি জেলায় কৃষকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গাড়ি চালিয়ে চারজনকে মেরে ফেলা হয়। মৃত্যু হয় এক সাংবাদিকেরও। এরপর উত্তেজিত কৃষকদের আক্রমণে নিহত হন চার বিজেপি সমর্থক। কৃষকদের অভিযোগ, বহরের একটি গাড়ি চালাচ্ছিলেন মন্ত্রীপুত্র আশিস। তিনি বন্দুক থেকে গুলিও ছোড়েন বলে অভিযোগ। বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে রাজ্য পুলিশের ওপর নির্ভর না করে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে ওই ঘটনার তদন্তভার তুলে দেন। তিনজন আইপিএস অফিসারকেও বেছে দেন সুপ্রিম কোর্ট। ফরেনসিক প্রতিবেদনে জানা যায়, আশিসের বন্দুক থেকেই গুলি ছোড়া হয়েছিল। এবার তদন্তকারী দলের নেতা জানালেন, ওই ঘটনা মোটেই দুর্ঘটনা ছিল না। ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
ভোটের আগে বিজেপির পক্ষে এটা বাড়তি বিড়ম্বনা হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিকল্পনার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর যোগসাজশ প্রমাণিত হলে বিরোধীরা ভোটের প্রচারে তা ব্যবহার করবেন। আন্দোলনকারী কৃষকদের নানা দাবির কাছে কেন্দ্র মাথা নোয়ালেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী রাজি হননি। দিল্লির সীমান্ত ছেড়ে কৃষকেরা ঘরে ফিরে গেলেও তাঁদের ক্ষোভ এখনো প্রশমিত হয়নি। আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা ‘বিজেপিকে ভোট নয়’ প্রচার শুরু করতে পারেন।