ভারতে অক্টোবরে করোনার তৃতীয় তরঙ্গ তুঙ্গে

অক্টোবর মাসে গোটা ভারত যখন উৎসবমুখর হয়ে উঠবে, তখনই তুঙ্গে উঠবে কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ বা ঢেউ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৃতীয় তরঙ্গ সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াবে শিশুদের মধ্যে। তা যদি হয়, তা হলে সেটা হবে বেশি চিন্তার। কেননা, কমিটির মতে শিশুদের দেখাশোনার মতো পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত দেশের সর্বত্র এখনো গড়ে ওঠেনি। সরকারের তাই এখন থেকে এই দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই প্রতিবেদন জমা পড়েছে। তাতে সরকারকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় দেশে যে অব্যবস্থা দেখা দিয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের উচিত এখন থেকেই সতর্ক হওয়া। কারণ, প্রথমত, শিশুদের চিকিৎসার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক, চিকিৎসার সরঞ্জাম, স্বাস্থ্যকর্মী বা পরিকাঠামো দেশে নেই। দ্বিতীয়ত, অক্টোবর থেকেই শুরু হচ্ছে উৎসবের সময় বা ‘ফেস্টিভ সিজন’। উৎসবের এই মৌসুমে মানুষজনকে ঘরে বন্ধ রাখা কঠিন। তা ছাড়া, উৎসব শুরুর আগে থেকেই স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে জনজীবন। তুলে দেওয়া হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। স্কুল–কলেজ কিছু রাজ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে, কোথাও খোলার কথা চলছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এখনো শিশুদের টিকার বন্দোবস্তই হয়নি।

ভারতে এই মুহূর্তে ১৮ বছরের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্যমাত্রা থেকে টিকাকরণের হার এখনো অনেক পিছিয়ে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের দেওয়ার মতো একটি মাত্র টিকাকে এ পর্যন্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সেটি গুজরাটের সংস্থা জাইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকভ ডি’ টিকা। এই টিকা মোট তিন ডোজের। সংস্থাটি জানিয়েছে, অক্টোবরে তারা মোট এক কোটি টিকা প্রস্তুত করতে পারবে। ডিসেম্বর নাগাদ মাসে ৩ থেকে ৫ কোটি। অথচ সরকারের ধারণা ছিল, সংস্থাটি অক্টোবরেই পাঁচ কোটি টিকা প্রস্তুত করতে পারবে। কিন্তু তা সম্ভব হবে না বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। তা ছাড়া ১২ বছরের কম বয়সীদের দেওয়ার মতো টিকা এখনো তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় সরকারি এই রিপোর্ট যথেষ্ট আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। সরকারি রিপোর্টের মতো কয়েক দিন আগে আইআইটির এক গবেষণাপত্র গাণিতিক মডেল নির্ভর রিপোর্টে একই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিল, অক্টোবরেই শীর্ষে উঠবে তৃতীয় তরঙ্গ।

সরকারি প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে ‘আর ভ্যালু’র ওপর। একজন সংক্রমিত কতজনকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে সেটাই হলো ‘আর ভ্যালু’। দেশের একাধিক রাজ্যে এই ‘আর ভ্যালু’ জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে ১–এর ওপরে উঠে গেছে। অর্থাৎ তৃতীয় তরঙ্গ শুরু হয়ে গেছে সেই সময় থেকেই। শিশুদের কথা ভেবে তাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে শিশুদের কোমর্বিডিটি বা পার্শ্ব অসুখ রয়েছে, তাদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে শিশু চিকিৎসকদের ঘাটতি এই মুহূর্তে ৮২ শতাংশ।

আশঙ্কা সত্ত্বেও যেহেতু দেশে সংক্রমণের হার যথেষ্ট কমের দিকে, মৃত্যুহারও কমছে দিন দিন, বিভিন্ন রাজ্য সরকার তাই নিষেধাজ্ঞার বহরও কমিয়ে দিচ্ছে। জীবন ও অর্থনীতির মধ্যে প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থনীতি। উৎসবের মৌসুমে আরও স্বাভাবিক হবে জনজীবন। অক্টোবরে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, দশেরাসহ নানা উৎসব পালিত হবে ভারতের নানা রাজ্যে।