ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর নতুন রাজনৈতিক দল গড়ছেন

প্রশান্ত কিশোর
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর সেই পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন। ভারতের অন্যতম এই ভোট কুশলী এবার নতুন একটি রাজনৈতিক দল গড়তে চলেছেন।

গত ২ মে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। আর প্রশান্ত কিশোর ছিলেন মমতার দলের নিয়োজিত ভোট বিশেষজ্ঞ বা নির্বাচনের প্রধান ভোট কুশলী। এই প্রশান্ত কিশোরকে ভোট কুশলী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে জয়ের নতুন রেকর্ড হয়েছে তৃণমূলের।

কিন্তু বিপুল ভোটে তৃণমূল জয়ী হওয়ার পর প্রশান্ত কিশোর বলেন, ‘এবার আমার কাজ শেষ, এবার বিদায় নেওয়ার পালা। মমতাকে সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি। এই জয়ের মধ্যে আমি জানিয়ে রাখি যে আমি আমার এই কাজ ছাড়ছি। আর এই কাজ করতে চাই না। অনেক হয়েছে। সহকর্মীদের হাতে আইপ্যাকের দায়িত্ব তুলে দিয়ে এবার আমি অন্য কিছু করতে চাই।’

ভোট কুশলীর পদ থেকে চলে যাওয়ার পর কী করবেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তিনি বলেন, অন্য কিছু ভাবব। এরপরই সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, তবে কি আপনি রাজনীতিতে যোগ দেবেন? এরও জবাব এড়িয়ে গেছেন তিনি। আবার প্রশ্ন আসে, আপনি কি এবার নিজেকে বাংলার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে চান? তারও জবাব পরিষ্কারভাবে দেননি তিনি। তবে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একজোট হতে বলেন তিনি।

এবার প্রশান্ত কিশোর উদ্যোগ নিয়েছেন বিজেপিবিরোধী একটি ফ্রন্ট গঠনের। এই লক্ষ্যে তিনি মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের সঙ্গে তিনবার বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া কথা বলেছেন সমাজবাদী পার্টি, আম-আদমি পার্টি, কংগ্রেস, শিবসেনা, ডিএমকে, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিজেপিবিরোধী অন্য দলের নেতাদের সঙ্গে।

সূত্র বলেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লিংকম্যান হিসেবে অবতীর্ণ হয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য মাঠে নামবেন প্রশান্ত কিশোর। আর এই লক্ষ্যে তিনি একটি নতুন দল গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। বিরোধী দলকে এক কাতারে এনে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে চাইছেন তিনি। সেই লক্ষ্য নিয়ে এবার এগোচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর।

প্রশান্ত কিশোর বিহারের মানুষ। ইতিমধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট কুশলী হিসেবে কাজ করে নিজস্ব ইমেজ তৈরি করেছেন তিনি। যদিও ৪৪ বছর বয়সী প্রশান্ত কিশোর বিহারের সংযুক্ত জনতা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন ওই দলের রাজ্য সহসভাপতিও। পরে বিহারের সংযুক্ত জনতা দলের নেতা নীতিশ কুমারের সঙ্গে বনিবনা না হলে তিনি জনতা দল ছেড়ে দেন।

ভোট কুশলী হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের। ২০১২ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন, ২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন, ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচন, ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাব বিধানসভার নির্বাচন, ২০১৯ সালে অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন, ২০২০ সালে বিহার ও দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট কুশলী হিসেবে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি।

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ এই নির্বাচনে বিজেপি ঘোষণা দিয়েছিল, রাজ্যের দখল নেবে তারা। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, বিজেপি ফলাফলে দুই অঙ্কের গণ্ডি পেরোতে পারবে না। তৃণমূল জিতবে ২০০ বেশি আসনে। সত্যিই তাই হয়েছিল। ২৯৪ আসনের বিধানসভায় বিজেপি জিতেছিল ৭৭টি আসনে। আর তৃণমূল জিতেছিল ২১৩টি আসনে। তিনি বলেছিলেন, যদি বিজেপি তিন সংখ্যার আসন পায় তবে তিনি তাঁর নিজের সংস্থা আই-প্যাককে ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাবেন।

বাজিতে জিতেছেন প্রশান্ত কিশোর। সূত্র বলছে, এরপরও হয়তো ভোট কুশলীর পেশায় তিনি আর বেশি দিন থাকছেন না।