মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষবরণ

পশ্চিমবঙ্গে বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচগান আর সড়কে আলপনাসহ ছিল নানা আয়োজন। বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য সামনে রেখে এসব আয়োজন সাজানো হয়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচগান, মঞ্চনাটক, সড়কে আলপনাসহ নানা আয়োজনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আজ শুক্রবার নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে। বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য সামনে রেখে এবার কলকাতাসহ গোটা রাজ্যে আনন্দঘন পরিবেশে উদ্‌যাপিত হয়েছে নববর্ষ।

বাংলাদেশে নতুন দিনপঞ্জি চালু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে কখনো এক দিন পরে আবার কখনো একই দিন বাংলা বর্ষবরণ হয়ে আসছে। ২০১৬ সালে একই দিনে উদ্‌যাপিত হয়েছিল নববর্ষ। কিন্তু এবার পশ্চিমবঙ্গে এক দিন পরেই আসে বাংলা নতুন বছর ১৪২৯।

এ বছর কলকাতার বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণ করেছে বাঙালির ঐতিহ্যের মোড়কে। দাবি উঠেছে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ হোক বাঙালির জাতীয় উৎসব। আর এই উপমহাদেশ হোক ধর্মনিরপেক্ষতার পীঠস্থান।
বাংলা বর্ষবরণে এবার কলকাতায় বের হয়েছে তিনটি বড় মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বেশ কয়েকটি শোভাযাত্রা। ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রার আদলে কলকাতায় ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই শোভাযাত্রা। অবশ্য ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়নি।

নতুন বর্ষবরণে কলকাতায় বের হয় একাধিক মঙ্গল শোভাযাত্রা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানে শুরু হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হয়। এটির উদ্বোধন করেন পুরুলিয়ার মানভূমের ভাষাসৈনিক ৯০ বছরের কাজল সেন। দ্বিতীয়টি ঢাকুরিয়া থেকে বের হয়ে কমলা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। প্রথম দুটি বড় শোভাযাত্রার আয়োজন করে কলকাতার মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্র।

তৃতীয় বড় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি হয় দক্ষিণ কলকাতার সুকান্ত সেতু থেকে। শেষ হয় যোধপুর পার্কে। আয়োজন করেন বামপন্থী সংস্কৃতিসেবীরা। এ ছাড়া কলকাতায় আজ আরও বেশ কয়েকটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এর মধ্যে আনন্দপুর থেকে রাজডাঙ্গা, সন্তোষপুর থেকে সুকান্ত সেতু, গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ উল্লেখযোগ্য।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল হাতি, ঘোড়া, প্যাঁচা, ময়ূর, বাঘ, সিংহের প্রতিকৃতিসহ নানা মুখোশ, পাখা, কুলা, নৌকা, দোতারা, বাঁশি ও ঢোল। এতে শিশুদের নেচেগেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। নানা রকম মুখোশ পরে আনন্দে মেতেছিলেন অনেকে। হাতে ছিল বাঙালির ঐতিহ্যের আরও নানা পটচিত্র ও প্রতীক। প্রতিটি শোভাযাত্রায় পা মিলিয়েছে সব বয়সী মানুষ।

নেচেগেয়ে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নেন পশ্চিমবঙ্গের নানা বয়সের মানুষ
ছবি : ভাস্কর মুখার্জি

মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্রের সম্পাদক বুদ্ধদেব ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাই কলকাতায় ২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশের অনুপ্রেরণায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি। এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ২৩ জেলার মধ্যে ৬ জেলার ১০টি জায়গা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করতে পেরেছি।’
বুদ্ধদেব ঘোষ বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে রাজ্যের সব জেলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা সম্ভব হবে। বাংলা নববর্ষে তাঁরা এই বার্তা দিতে চান—এই উপমহাদেশ হোক ধর্মনিরপেক্ষতার এক পীঠস্থান। পয়লা বৈশাখ পালিত হোক বাঙালির জাতীয় উৎসবের দিন হিসেবে।

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে কলকাতার সড়কে আঁকা হয় আলপনা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি এবং নবজাগরণ যৌথভাবে কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের ছাতিমতলার রাণুছায়া মঞ্চে বর্ষবিদায় ও নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নাচগান, কবিতা পাঠ আর নাটকের মাধ্যমে সূচনা হয় নববর্ষের অনুষ্ঠানের। এখানে একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চস্থ হয় দুটি নাটক—‘বাঘ ছাল’ ও ‘আদাব’।

ভাষা ও চেতনা সমিতি কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের সড়কে আলপনা আঁকে। এখানে গতকাল সন্ধ্যা ও আজ সকালে আয়োজন ছিল পান্তা, শুঁটকি ও আমপোড়া শরবতের। ছিল মাছ–ভাত আর পোস্তরও ব্যবস্থা। আজ সকাল আটটায় পার্ক স্ট্রিটের সরকারি আর্ট কলেজের সামনে থেকে বের হয় নববর্ষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এটি শেষ হয় একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরে।

আজ পান্তা-শুঁটকি, আলুভর্তা-চিংড়ি আর আমপোড়া শরবত খেয়ে নববর্ষের সূচনা করে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতির শিশুদের পাঠশালা। সকালে কলকাতার মানিকতলার খালধারে ভাষা ও চেতনা সমিতির পাঠশালায় করোনাবিধি মেনে আয়োজন করা হয় নববর্ষের অনুষ্ঠানের। তবে গতবারের মতো এবারও করোনার কারণে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন আয়োজন করেনি নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠান।