মমতার তৃণমূলে অন্তর্দ্বন্দ্ব
পশ্চিমবঙ্গে এবার মমতার তৃণমূল কংগ্রেসে শুরু হয়েছে চ্যালেঞ্জ আর পাল্টা চ্যালেঞ্জের লড়াই। এই লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মমতার ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যকে ঘিরে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে পৌর নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, ‘করোনা আবহে এই রাজ্যে সব ধরনের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সভা বন্ধ রাখা হোক। এখন আমাদের রাজ্যবাসীর প্রাণ বাঁচানো মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
২২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি, আসানসোল, বিধাননগর ও চন্দননগর পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যকে মেনে নিতে পারেননি তৃণমূলের একাংশের নেতারা। কারণ, তৃণমূল করোনা আবহেও নির্বাচন করার জন্য মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
তাঁরা প্রকারান্তরে অভিষেককে একহাত নিয়ে শুক্রবার চালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, মমতা ছাড়া তাঁরা তৃণমূলের কাউকে নেতা হিসেবে মানেন না। যিনি যে পদে আছেন, সেই পদকে তাঁরা সম্মান করেন। কিন্তু নেতা বলে মানেন না। অভিষেককে খোঁচা মেরে এই নেতারা আরও বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ত্রিপুরা আর গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে দলকে জিতিয়ে আনতে পারেন, তাহলে তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নেবেন তাঁরা।
এই নেতাদের একজন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেককে কটাক্ষ করে বলেন, ‘অভিষেকের বক্তব্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদটি সর্বক্ষণের। এই পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত মত থাকতে পারে না।
অনেক বিষয়েও আমার ব্যক্তিগত মত থাকে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণে তা প্রকাশ্যে বলি না। অভিষেকের মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিরোধিতা করার শামিল। এভাবে মন্তব্য করে কার্যত রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।’
যদিও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ও রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘মমতা হলেন দলের সর্বাধিনায়ক। তাঁর পরে রয়েছেন অভিষেক। তাই অভিষেকের মতো নেতা কিছু বললে তা চুপ করে শোনা উচিত। কোনো মন্তব্যের আগে সব দিক ভেবে বলা উচিত।’
প্রসঙ্গত, কুণাল ঘোষ এখন তৃণমূলের সাংসদ ও দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর সারদা আর্থিক দুর্নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন তিনি; ছিলেন সারদার মিডিয়া সেলের প্রধান। সারদায় দুর্নীতির কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জেল খেটেছেন। এমনকি সারদা থেকে নেওয়া ২ কোটি ৬৭ লাখ রুপি ২০২১ সালের মার্চে ফেরতও দিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসও তাঁকে ছয় বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছিল। সেই কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে এখনো মামলা চলছে। আছেন জামিনে। তবে তৃণমূলেই রয়েছেন।