ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল আসন্ন। কিন্তু কবে সেই জরুরি কাজ সম্পন্ন হবে, এখনো তা অজানা। রাজধানীর ক্ষমতার অলিন্দ এই মুহূর্তে এ নিয়েই সরগরম।
দুই বছর আগে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেননি। এখন তা করা প্রয়োজন আগামী বছরের গোড়ায় উত্তর প্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন উপলক্ষে। তা ছাড়া গত দুই বছরে মন্ত্রিসভার বহরও কমেছে নানা কারণে। শরিকদের মধ্যে একে একে ছেড়ে গেছে শিবসেনা ও অকালি দল। লোক জনশক্তি পার্টির নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছেন বিজেপির মন্ত্রী সুরেশ আঙ্গাদিও। আয়ুষমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন।
বিহারের শরিক সংযুক্ত জনতা দল এত দিন উপযুক্ত মন্ত্রণালয় না পেলে মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিল। তারা এখন অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দাবি করছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমারের এই দাবি না মানলে রাজ্য দখলে রাখা নিয়ে নতুন সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। সেখানে বিজেপি–জেডিইউ টানাপোড়েন অব্যাহত। এর মধ্যে নিতিশ লোক জনশক্তি পার্টিতে ভাঙন ধরিয়ে চিরাগ পাসোয়ানের বিরোধিতার প্রতিশোধ নিয়েছেন।
সম্প্রসারণ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উত্তর প্রদেশের জন্য। এ রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে বিশেষ নজর দিতেই হবে। কেননা দলের অনেক সমর্থকদের কাছেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অপ্রিয়। সামনেই সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। এর আগেই এই রদবদল জরুরি। যদিও মাহেন্দ্রক্ষণ কবে, সেই নির্দিষ্ট উত্তর নেই।
সম্ভাব্য মন্ত্রিত্বের দাবিদার একাধিক। ১৫ মাস আগে মধ্যপ্রদেশকে কংগ্রেসের হাত থেকে মুক্ত করতে বিজেপি যাঁকে দলে টেনেছিল, সেই কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁরই মতো অপেক্ষা করছেন বিহারের বিজেপি নেতা সুশীল মোদি ও আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
উত্তর প্রদেশে অখুশি ব্রাহ্মণ সমাজের মান ভাঙাতে কংগ্রেস নেতা জিতিন প্রসাদকে দলে টেনেছে বিজেপি। তাঁকেও মন্ত্রী করার কথা। এই ডামাডোলের মধ্যে চাপ বাড়িয়েছে উত্তর প্রদেশের শরিক আপনা দল ও নিষাদ পার্টি। আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। মন্ত্রিত্বের দাবিদার তিনিও। তাঁরই মতো দাবিদার নিষাদ পার্টির প্রবীণকুমার নিষাদের। এঁদের মতো ছোট ছোট জাতভিত্তিক দলকে সঙ্গে নিয়ে ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’–এর মাধ্যমেই ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে বিজেপির ক্ষমতায় আসা।
আলোচনা চলছে পশ্চিমবঙ্গ নিয়েও। তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে লজ্জাজনক হারের পর রাজ্যের নতুন কোনো মুখ তুলে আনা হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। রদবদল আরও দরকার একাধিক মন্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকায়।
তবে রদবদলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রে বদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রেল ও কৃষি মন্ত্রণালয়ও বিজেপি হাতছাড়া করবে না বলে ধারণা। শুধু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই নয়, সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দুই বছর ধরে ডেপুটি স্পিকারের পদ খালি পড়ে রয়েছে, সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে যা কোনো দিন হয়নি। বিরোধীদের বহু দাবি সত্ত্বেও ওই পদে এখনো কাউকে আনা হয়নি। প্রথা অনুযায়ী ডিপুটি স্পিকার পদ বিরোধীরা পেয়ে থাকেন।