নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে শুরু হলো ভারতীয় পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশন। আজ প্রথম দিনেই ধরা পড়ল, লোকসভার ১৭ জন সদস্য করোনাভাইরাসে (কোভিড ১৯) আক্রান্ত। দুদিন ধরে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
কোভিডের পরীক্ষা না করে কাউকে পার্লামেন্ট ভবন চত্বরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। করোনা থেকে সেরে ওঠা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তৃতীয়বারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী পুত্র রাহুলকে নিয়ে বিদেশে গেছেন চিকিৎসাজনিত কারণে।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান সর্বোচ্চ ছয় মাস। মার্চ মাসে বাজেট অধিবেশন মুলতবি হওয়ার সময় দেশজুড়ে করোনার বিস্তার হচ্ছিল। ছয় মাস পর দেশের পরিস্থিতি এখন জটিল। মোট সাড়ে ৪৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত। ৮০ হাজার প্রাণ হারিয়েছেন। দৈনিক সংক্রমণ প্রায় এক লাখ। মৃত্যু দিনে সহস্রাধিক। সাংবিধানিক বৈধতা রক্ষায় তাই অভিনব পদ্ধতিতে মাত্র ১৮ দিনের জন্য শুরু হয় বর্ষাকালীন অধিবেশন।
ঠিক হয়েছে, লোকসভা ও রাজ্যসভার দৈনিক অধিবেশন চলবে মাত্র চার ঘণ্টা করে। রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়, শেষ হবে বেলা ১টায়। লোকসভার অধিবেশন চলবে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আজ সোমবার শুধু সকালে চার ঘণ্টা লোকসভার অধিবেশন বসে।
সামাজিক দূরত্ব মেনে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে সাংসদের। কক্ষের বাইরে গ্যালারিতেও আসন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সময় সংক্ষেপের জন্য কোপ পড়েছে প্রশ্নোত্তর পর্বে। সে জন্য বিরোধীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। শুনতে হচ্ছে, বিরুদ্ধ স্বর বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর সরকার। জবাবে সরকার বলেছে, সদস্যরা ‘জিরো আওয়ারে’ প্রশ্ন করতে পারবেন। সংসদ শুরুর আগে প্রথামাফিক সর্বদলীয় বৈঠকও এই প্রথম বাতিল করা হলো। বিরোধীদের অভিযোগ, করোনার দোহাই দিয়ে সরকার যা খুশি তাই করতে চাইছে।
এই অধিবেশনে সরকারকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে। যেমন, চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ ও উত্তেজনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মুখ থুবড়ে পড়া এবং লাগামছাড়া করোনা সংক্রমণ। ছয় মাস আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাত্র ২১ দিন সময় চেয়েছিলেন করোনাকে বশে আনতে। এখন ওই বিষয়ে উচ্চবাচ্য নেই। বেহাল অর্থনীতি নিয়েও নিরুত্তর। সীমান্ত উত্তেজনা প্রসঙ্গে সোমবার শুধু বলেছেন, ‘আশা করি সংসদ এবং সব সদস্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বার্তা দেবে যে গোটা দেশ আমাদের বীর সেনাদের পাশে রয়েছে।’