গান–দ্বন্দ্ব–রাজনীতি নিয়ে শেষ সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন লতা

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরফাইল ছবি: রয়টার্স

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের (৯২) চিরবিদায়ে উপমহাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে উপমহাদেশে।

কিংবদন্তি লতার জন্ম ১৯২৯ সালে, ভারতের ইন্দোরে। তিনি ৩৬টি ভাষায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার গান গেয়েছেন। পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন। পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।

সদ্য প্রয়াত লতার সাক্ষাৎকার অনেকবার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ভারতীয় সাংবাদিক খালিদ মোহাম্মদের। তাঁকে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে লতা নিজের জীবনের নানা অজানা দিক খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেছেন। এই সাক্ষাৎকারে লতার ব্যক্তিজীবন, সংগীতজীবন, রাজনীতিসহ অনেক বিষয় উঠে এসেছে।

৯০ বছর বয়সে লতার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন সাংবাদিক খালিদ। ল্যান্ডফোনে দুই পর্বে লতার সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল। লতার মহাপ্রয়াণে তাঁর সেই সাক্ষাৎকারের কথা নতুন করে স্মরণ করেন খালিদ। তাঁর ভাষ্যমতে, সেই বয়সেও লতার কণ্ঠস্বর ছিল বরাবরের মতোই রেশমমসৃণ। একদম স্পষ্ট।

লতার চিরবিদায়ের পর আজ রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য কুইন্ট’-এ তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন অংশ স্মরণ করেছেন সাংবাদিক খালিদ। সেখান থেকে চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন :

তিনি সাত দশকের অর্জনগুলোর দিকে কখনো ফিরে তাকিয়েছেন কি না? সেখানে কোনো যন্ত্রণাদায়ক ভাবনা আছে কি না? তাঁর কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ আছে কি না?

উত্তর: তিনি নিজেকে খুব চিন্তাভাবনা করা একজন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করেন না। তাঁর জবাব ছিল, অতীতে বাস করে লাভ নেই। শুধু একজন নার্সিসিস্টই আজ ও আগামীকালকে উপেক্ষা করে অতীত নিয়ে পড়ে থাকেন। কণ্ঠস্বর ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি গান চালিয়ে যেতে চান। গানই একমাত্র বিষয়, যা তিনি জানেন।

প্রশ্ন :

তিনি এই বিষয়ে একমত হবেন কি না যে তিনি পাকিস্তানি প্লেব্যাক শিল্পী নূর জাহানের স্টাইল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন?

উত্তর: ‘হ্যাঁ, আমাকে তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। আমি স্বীকার করব যে আমি তাঁর গান শুনে তাঁর স্টাইল অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি।’

প্রশ্ন :

তিনি কি বলবেন যে বর্তমানে একটি গানের জনপ্রিয়তা তার ভিডিও উপস্থাপনা ও সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে প্রচারের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর: এটা সময়েরই প্রতীক। ভিজ্যুয়াল এখন অডিওর মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন :

১৯৭০-এর দশকে তাঁর একচেটিয়া প্রভাব নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষয়টি তাঁর জন্য বেদনাদায়ক ছিল কি না?

উত্তর: তিনি সহজে আঘাত পান না। তাঁর যথেষ্ট বিচক্ষণতা আছে যে একটি ইন্ডাস্ট্রি—যেটি বিশ্বের সর্বাধিকসংখ্যক চলচ্চিত্র তৈরি করে, তার সব গান তাঁকে দেওয়া উচিত বলে তিনি বোধ হয় জোর দিতে পারেন না।

প্রশ্ন :

কয়েক দশক ধরে তাঁর সঙ্গে আশা ভোঁসলের মধ্যকার অব্যক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে হরদম কথাবার্তা চলছে। বিষয়টিকে তিনি কীভাবে দেখেন!

উত্তর: কিছু লোক তাঁদের স্বভাবগতভাবেই বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বলেন যে অমুক-অমুক গানটি লতা আশার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। কিংবা ঠিক তার উল্টোটা। ঘটনাটি হলো, তিনি আমোদ-প্রমোদের (ক্যাবারে) গানকে না করে দিতেন, যা স্বাভাবিকভাবেই আশার কাছে চলে যেত।

প্রশ্ন :

তিনি কি কখনো রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছেন?

উত্তর: কখনোই না। রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ নেই। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে ছয় বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। কিন্তু তিনি রাজ্যসভায় একটি কথাও বলেননি। তিনি চুপ করে ছিলেন। রাজনীতির সঙ্গে সংগীতের দূরত্ব ঠিক ততটাই, যতটা আকাশের সঙ্গে ভূমির। সংগীত আসে একটি কোমল হৃদয় থেকে। আর রাজনীতির জন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানসিকতার প্রয়োজন হয়।