ভারতে পেগাসাস বিতর্ক
সংসদে সরকারকে তোপ বিরোধীদের
নজরদারিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের নামও রয়েছে।
পেগাসাস–বিতর্ক ক্রমেই দানা বাঁধছে। এ জন্য সংসদে বিরোধীরা সরকারকে সমালোচনা করেছেন। অভিযোগ, ফোন নজরদারির আওতায় রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, সাংসদ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোট পরিচালনা করা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের নামও রয়েছে এ তালিকায়। ভারতের নির্বাচন কমিশনের সাবেক সদস্য অশোক লাভাসা, যিনি ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নির্বাচনী ভাষণ আপত্তিজনক বলে মনে করেছিলেন, তাঁর নামও এ তালিকায় রয়েছে।
বিস্ময়করভাবে ফোন নজরদারির তালিকায় রয়েছে বিজেপির দুই মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল ও অশ্বিনী বৈষ্ণর নামও। বৈষ্ণ সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। গতকাল সোমবারই লোকসভায় তিনি বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের বদনাম করাই ‘পেগাসাস প্রোজেক্টের’ লক্ষ্য।
পেগাসাস নজরদারি নিয়ে সংসদে বিরোধীরা একযোগে সরকারকে চেপে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও গতকাল তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ বলেছেন, ওই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য খামোখা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা। সেটাও সংসদের অধিবেশনের ঠিক আগে, যা নিছকই কাকতালীয় নয়। তিনি বলেন, ভারতীয় গণতন্ত্র ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বদনাম করাই ‘পেগাসাস প্রোজেক্টের’লক্ষ্য। দেশজোড়া কৌতূহল ও বিরোধীদের প্রতিবাদের মধ্যে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতে কোনোরকম অবৈধ নজরদারি চালানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
দেশে ফোনে আড়ি পাতা বা নজরদারির ঘটনা যে হচ্ছে না, মন্ত্রী তা বলেননি। তিনি বলেছেন, বেআইনিভাবে কোনো নজরদারি বা আড়ি পাতা চালানো এ দেশে সম্ভব নয়।
গত রোববার রাতে ভারতসহ ১৬ দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের অন্তঃ তদন্তমূলক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের এনএসও সংস্থার তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে ভারতের মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, সাংবাদিক, আইনজীবী, সমাজকর্মী, শিল্পপতিদের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। এলগার পরিষদ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আটজন সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবীর নামও ওই তালিকায় রয়েছে বলে পেগাসাস প্রোজেক্টের দাবি। রয়েছে সর্বভারতীয় বহুল প্রচারিত বহু সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নামও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ার–এ প্রকাশিত এই খবরকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন। গতকালই শুরু হয় ভারতীয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন। শুরু থেকেই পেগাসাসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধীরা সরকারকে কোণঠাসা করতে থাকেন। লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই বিরোধীদের বাধায় স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। লোকসভার সদস্যদের সঙ্গে প্রথাগতভাবে নতুন মন্ত্রীদের পরিচয় করানোর সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাধা দেন। বিরোধী সদস্যরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সভার ‘ওয়েলে’ নেমে আসেন। কৃষি আইন প্রত্যাহার, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মাত্রাছাড়া মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের নজরদারির বিরোধিতাও করতে থাকেন তাঁরা। আগামী দিনে সংসদে সরকারকে এই চাপের মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দিন কয়েকের মধ্যে আরও নামের তালিকা প্রকাশ হবে বলেও খবর।