ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল এ রাজ্যে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া। কিন্তু বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এ কারণে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে খানিকটা সুর নরম করেছে বিজেপি।
গতকাল শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগরে একটি দলীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। ওই সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমরা এই বাংলায় সিএএ কার্যকর করব। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে আমরা তাড়াতাড়ি বা দ্রুত সিএএ এই রাজ্যে কার্যকর করতে পারব। আর তা না হলে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সুবিধামতো সময়ে এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
যদিও সিএএ নিয়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। মমতা বারবার ঘোষণা দিয়েছেন, এই রাজ্যে তিনি সিএএ কার্যকর করতে দেবেন না। মমতার কথা, সবারই তো রয়েছে ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি, তাই আবার কিসের প্রয়োজন নাগরিকত্বের পরিচয়পত্রের?
এ কারণে সিএএ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির কী ভূমিকা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যবাসীর মধ্যে; বিশেষ করে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের মনে। কারণ, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিএএ–বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় অনেকটাই বিপদে পড়েছেন তাঁরা।
উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার পাস করেছিল সিএএ। এই সিএএকেই ইস্যু করে প্রচার চালিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ অন্যরা। তাঁরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতা এলে দ্রুত কার্যকর করা হবে সিএএ। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া এ নিয়ে নতুন করে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে।
তৃণমূল যেমন শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তেমনি বিজেপিও তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় মতুয়াদের নেতা ও বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁকে দেওয়া হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর পদ। বিজেপি বোঝাতে চেয়েছে, সিএএ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করবে।
এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মতুয়াদের সম্মান দেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ তাঁদের উন্নয়নের জন্য মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রী করা হয়েছে। এতে দোষ কোথায়? আমাদের লক্ষ্য মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়াসহ তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা মনে করি, মতুয়াদের স্বার্থ রক্ষা করতে সিএএ কার্যকরে যথার্থ ভূমিকা নেবে বিজেপি।’
ইতিমধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুরা, যাঁরা অন্য রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন, সেসব হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিষ্টান ও জৈন সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন। নির্বাচনের পর বিজেপি বুঝে নিয়েছে, মমতা যেভাবে বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন, তাতে এ মুহূর্তে সিএএ বাস্তবায়ন একটু কঠিন। তাই দিলীপ ঘোষ অকপটে বলেছেন, ‘আমরা সিএএ কার্যকর করতে মমতার সহযোগিতা চাই।’
রাজ্য বিজেপির পরাজয় নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘দল হেরেছে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। যাঁরা এটা বিশ্বাস করেন, তাঁদের এটা সমস্যা। অনেকে তো অনেক কিছু কল্পনা করেছিল, স্বপ্ন দেখেছিল, সে স্বপ্ন কার্যকর হয়নি। বরং আমরা লড়াই করে আমাদের শক্তি ২৬ গুণ বাড়িয়েছি। বাকিটা লড়াই করে পাঁচ বছরে পূর্ণ করব।’