আজ শুক্রবার দিল্লিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন
ছবি: রয়টার্স

সীমান্ত বিবাদ না মিটলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরও উন্নতি হবে না। ভারত সফরে আসা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইকে আজ শুক্রবার এ কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত বিরোধ যে দূরত্বের জন্ম দিয়েছে, তা কমিয়ে আনা। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার ওপরেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওঠানামা নির্ভর করে। জমে ওঠা সমস্যার সমাধানে আরও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে।

ওয়াং ই গত বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি পৌঁছান। দিল্লি আসার আগে তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সফর করেন। পাকিস্তানে ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো–অপারেশন’–এর (ওআইসি) দুদিনের সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে কাশ্মীর সম্পর্কে এমন কিছু মন্তব্য করা হয়েছিল, যা ভারত অনুমোদন করে না। ওআইসিতে ওয়াং ইর ভাষণ এবং সেখানে গৃহীত কাশ্মীর সম্পর্কিত প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভারত বুধ ও বৃহস্পতিবার কড়া বিবৃতি দেয়। আর এ কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে পূর্বঘোষণা ছাড়াই ওয়াং ই দিল্লি পৌঁছান। শুক্রবার তিনি প্রথম বৈঠক করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। তারপর তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনায় বসেন জয়শঙ্করের সঙ্গে।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘যদি প্রশ্ন করা হয় ভারত–চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক কি না, আমি উত্তরে বলব, না। মোটেই স্বাভাবিক নয়। এর কারণও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীনের কাজকর্ম। তাদের সেনা সমাবেশ। জোর করে স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করা ঠিক নয়। ২০২০ সাল থেকে চীনের জন্য পূর্ব লাদাখে যে সংঘর্ষ ঘটছে, উত্তেজনার পারদ চড়ছে, তা কমানোর লক্ষ্যেই আজ আমরা আলোচনা করেছি। এ পরিস্থিতিতে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকতে পারে না।’

জয়শঙ্কর পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এখন যা অবস্থা তাতে বলা যায়, কাজ চলছে। তবে চলছে খুবই ঢিমেতালে। যতটা অগ্রগতি হওয়া উচিত ছিল, ততটা হয়নি।’

জয়শঙ্কর বলেন, ভারত–চীন সুসম্পর্ক তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক স্পর্শকাতরতার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা। এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে জয়শঙ্কর স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন যে তিনটি বিষয়েই ঘাটতি রয়েছে। তা পূরণ না হলে সম্পর্কও স্বাভাবিক হতে পারবে না।

দুই বছর ধরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবস্থান এ রকম। ভারত বারবার বলছে, সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সম্পর্ক কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারবে না। চীন মনে করে সীমান্ত পরিস্থিতি যেমন রয়েছে, তেমন রেখেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যায়। এ পারস্পরিক টানাপোড়েনের মধ্যেই বহমান দুই দেশের সম্পর্ক।

ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেন সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে তোলা কাশ্মীর প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছেন বলে জয়শঙ্কর নিজেই সংবাদ সম্মেলনে জানান। তিনি বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, আমরা চাই তাঁরা ভারত সম্পর্কিত নীতি নিজেরাই নিন। স্বাধীনভাবে। অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে।’ তিনি বলেন, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানে ওয়াং ইর মন্তব্য কেন আপত্তিজনক, তা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বিবদমান এলাকা থেকে যত দ্রুত সেনা সরানো হবে, ততই সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। ওয়াং ইকে তিনি বলেছেন, ‘বাধাগুলো সরিয়ে নিন, দেখবেন সম্পর্কও স্বাভাবিক খাতে বইতে শুরু করেছে।’

পূর্ব লাদাখের গালওয়ান এলাকায় ২০২০ সালের জুন মাসে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এই প্রথম চীনের কোনো নেতার ভারত সফর। এ সফর ঘিরে অদ্ভুত এক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। বেইজিং বা দিল্লি কেউ এ সফর শুরুর আগাম বার্তা দেয়নি। কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, চীন চায়নি তাই। পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের পর ওয়াং ই গেছেন নেপাল সফরে।