সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মন্ত্রীকে বরখাস্তের দাবি কংগ্রেসের

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দর সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানান।

অজয় মিশ্র

লখিমপুর খেরি ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রকে বরখাস্তের দাবি জানাল কংগ্রেস। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এক প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দর সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানান। রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পুত্র গাড়িচাপা দিয়ে কৃষকদের মেরে ফেলেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা না হলে কিছুতেই নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে না।

বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁদের বলেছেন, বুধবারই তিনি এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁরা এ কথাও বলেন, রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে ওই নারকীয় ঘটনার তদন্ত করানো হোক। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো চায় দোষী ব্যক্তিরা দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি পাক।

৩ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলায় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরত কৃষকদের গাড়িচাপা দেয় রাজ্যের শাসক দল বিজেপি নেতাদের এক গাড়িবহর। সেই ঘটনায় চারজন কৃষক ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হন বহু। উত্তেজিত জনতার প্রহারে পরে মারা যান আরও চারজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর পুত্র আশিস ওই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু রাজ্য পুলিশ পাঁচ দিন তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলাটি গ্রহণ করেন। রাজ্য সরকার ও পুলিশকে কড়া তিরস্কার করেন। তারপর আশিসকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রাজ্য রাজনীতি এ ঘটনায় উত্তাল। বিরোধীরা সক্রিয়। গত মঙ্গলবার লখিমপুর খেরিতে নিহত কৃষক ও সাংবাদিকের স্মরণসভায় শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রিয়াঙ্কা ও রাষ্ট্রীয় লোকদল নেতা জয়ন্ত চৌধুরী। বুধবার কংগ্রেস প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বরখাস্ত ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেন। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা বলেন, এ ঘটনা দেশের অন্তরাত্মা নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে এ কাজ করা এবং যেভাবে অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে, তাতে সরকার ও প্রশাসনের ওপর থেকে মানুষ বিশ্বাস হারিয়েছে। তাঁরা বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের বদ্ধমূল ধারণা, মন্ত্রী বহাল থাকলে ন্যায়বিচারের আশা ক্ষীণ। তাঁদের সেই ধারণার কথাই তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে জানালেন। কংগ্রেস প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাগড়ে, এ কে অ্যান্টনি, গুলাম নবী আজাদ, অধীর চৌধুরী ও কে সি বেনুগোপাল।

কৃষক আন্দোলন ও কৃষক হত্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নির্মলাকে এ বিষয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে এ ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণ নিন্দনীয়’ বলেও তিনি জানান, এমন ধরনের ঘটনা দেশের অন্যত্রও ঘটছে। কিন্তু সে সব নিয়ে হইচই হয় না। হইচই তখনই হয়, যখন তা বিজেপিশাসিত রাজ্যে ঘটে।

নির্মলাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত মারাত্মক একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ প্রধানমন্ত্রী নির্বাক। বিজেপির শীর্ষ নেতারাও চুপ। সরকার আড়ষ্ট। কেন এ আচরণ? জবাবে নির্মলা বলেন, দেশের রাজনৈতিক চরিত্রই এমন হয়ে গেছে। অমর্ত্য সেনসহ বিরোধীরা সব সময় সেই প্রশ্নগুলোই তোলেন, যেগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন।