হলফনামা না দিতে অনড় ভারত সরকার

সলিসিটর জেনারেলের মুখে আবারও নিরাপত্তার প্রশ্ন। দুই–তিন দিনের মধ্যে রায় জানাবেন সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ছবি: এএফপি

ফোনে আড়ি পাততে আইনবহির্ভূতভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রইল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ–সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় তদন্ত কমিটি গড়ার দাবি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট দুই–তিন দিনের মধ্যে রায় জানাবেন। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা গতকাল সোমবার এ অভিমত জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রযুক্তি ‘পেগাসাস’–এর মাধ্যমে ভারত সরকার ব্যক্তিবিশেষের ফোনে আড়ি পাতছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁদের দাবি, ‘এর ফলে তাঁদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। অতএব সুপ্রিম কোর্ট অভিযোগের তদন্তে এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিন এবং কার নির্দেশে এমন সংবিধানবহির্ভূত কাজ করা হচ্ছে, তা জানাতে সরকারকে বাধ্য করুন।’ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে এক মাস ধরে এ বিষয়ে দায়ের করা এক গুচ্ছ মামলার শুনানি চলছে।

প্রধান বিচারপতি গত মাসেই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে হলফনামা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র রাজি নয়। সলিসিটর জেনারেল গতকালও পুরোনো যুক্তিতে অটল থেকে বলেন, সরকার আইনবহির্ভূতভাবে কিছু করেনি। প্রযুক্তির ব্যবহারের যে প্রশ্নটি আদালতের বিবেচ্য, তার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত। নিরাপত্তার স্বার্থেই কোনো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা হলফনামা দিয়ে বলা সম্ভব নয়। কারণ, তাতে সন্ত্রাসবাদীরা সচকিত হয়ে যাবে। জেনে যাবে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তবে অভিযোগের সারবত্তা খুঁজতে সরকার এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়তে প্রস্তুত। সেই কমিটিই তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে পারে, কারও মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে কি না। বেআইনি কিছু করা হচ্ছে কি না।

সরকার জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করে হলফনামা দিতে অস্বীকার করছে। অথচ সরকার যা করছে তা দেশের নিরাপত্তা নয়, ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
কপিল সিব্বাল, সাংবাদিক এন রাম, শশী কুমার ও এডিটরস গিল্ডের আইনজীবী

প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি হিমা কোহলি কেন্দ্রের যুক্তি মানতে চাননি। সলিসিটর জেনারেলকে তাঁরা বারবার বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকে কোনো রকম আপস করার কথা তাঁরা বলছেন না। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক এমন কোনো তথ্য জানাতেও তাঁরা সরকারকে বাধ্য করছেন না। তাঁরা শুধু জানতে চান, সরকারের বিরুদ্ধে বহু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক যে অভিযোগ এনেছেন, তা সত্য কি না। তাঁদের ফোনে আড়িপাততে সরকার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে কি না এবং তা দেশের আইন ও নিয়মবহির্ভূত কি না।

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের হদিস পেতে ইসরায়েলের সংস্থা এনএসও ‘পেগাসাস’ প্রযুক্তি তৈরি করেছে। এ প্রযুক্তি তারা বিভিন্ন সরকার ও সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করেছে। সেই প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন দেশের সরকার বিরোধী ও সমালোচকদের ফোনেও আড়ি পেতেছে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের এক সংগঠনের অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এ কথা ফাঁস হয়েছে। সেসব সরকারের মধ্যে ভারতও রয়েছে। আড়ি পাতা হয়েছে সাংবাদিক, সাংসদ, বিচারপতি, মানবাধিকারকর্মীসহ বহু ব্যক্তিবিশেষের ফোনে। এর বিরুদ্ধে বিশিষ্ট সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, এডিটরস গিল্ডসহ অনেকেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কেন্দ্রীয় সরকার হলফনামা দিতে রাজি না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁরা এ বিষয়ে রায় জানাবেন।

সলিসিটর জেনারেল বেআইনি কিছু করা হয়নি জানিয়েও বলেন, অভিযোগের তদন্তে সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়তে প্রস্তুত। সেই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট মানেননি। প্রধান বিচারপতি বলেন, কমিটি গঠনের বিষয় এখন বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য সরকার হলফনামা দেবে কি না।

সাংবাদিক এন রাম, শশী কুমার ও এডিটরস গিল্ডের আইনজীবী কপিল সিব্বাল গতকালের শুনানিতে বলেন, সরকার জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করে হলফনামা দিতে অস্বীকার করছে। অথচ সরকার যা করছে তা দেশের নিরাপত্তা নয়, ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অথচ ভারত সরকার নির্বিকার। ২০১৯ সালেও এ অভিযোগ উঠেছিল। অথচ আজও সরকার জানাতে পারেনি অবৈধভাবে ফোনে আড়ি পাতা রুখতে কী করা হয়েছে।