হোয়াটসঅ্যাপ-ইনস্টাগ্রামে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুতে ভারতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে রয়েছে অক্সিজেন ও ওষুধের সংকট। অনেক হাসপাতাল থেকেই রোগীর স্বজনদের নিজেদের চেষ্টায় অক্সিজেন জোগাড় করে আনতে বলা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে যোগাযোগের একটা বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ। তারপরও অনেকের ক্ষেত্রে শেষরক্ষা হচ্ছে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে এ রকম কয়েকজনের কথা উঠে এসেছে। ভারতে করোনায় সংক্রমিত রোগীর স্বজনেরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন, করোনাভাইরাসের ওষুধ রেমডিসিভির ও প্লাজমার খোঁজ করেন। বিভিন্ন সংগঠন এসব তথ্য দিয়ে তাঁদের সহায়তা করে।
হোয়াটসঅ্যাপে কিছুক্ষণ আগেই হয়তো কেউ লিখলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে দুটি শয্যা খালি আছে। এক মিনিট পরেই আবার লিখতে দেখা যায়, সেগুলোয় রোগী ভর্তি হয়ে গেছেন।
গত শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদক তথ্যের জন্য উত্তর প্রদেশের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই ব্যক্তি স্বজনের জন্য অক্সিজেন খুঁজছিলেন। গত রোববার ওই সাংবাদিক যখন এ প্রতিবেদন লেখা শেষ করেন, তখন সেই রোগী আর বেঁচে নেই।
অবনি সিংয়ের দাদুর (মায়ের বাবা) বয়স ৯৪। তিনি দিল্লিতে থাকেন। করোনায় সংক্রমিত দাদুর জন্য অক্সিজেন আর ইনজেকশনের খোঁজে অবনি প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সবার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন।
অবনি এবং তাঁর মা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিবিসিকে অবনি বলেন, ‘আমরা পরিচিত সবার কাছে সাহায্য চাইছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজে আইসিইউ বেড ও অক্সিজেনের খোঁজ চলছে। প্রায় ২০০টি জায়গায় আমরা এভাবে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ অনেক চেষ্টার পরে স্কুলের একজন বন্ধুর মাধ্যমে অবনি তাঁর দাদুর জন্য অক্সিজেন জোগাড় করতে পেরেছিলেন। সেই বন্ধু অক্সিজেনের খোঁজ না দিলে হয়তো অবনির দাদু আর বাঁচতেন না।
অক্সিজেন তো পাওয়া গেল। এরপর অবনি ও তাঁর মা রেমডিসিভির ইনজেকশনের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দিল্লিতে বসবাসরত অবনির মামাও একইভাবে খোঁজ করছেন অক্সিজেন আর ইনজেকশনের।
অবনি বলেন, ‘আমার দাদু আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। ইনস্টাগ্রাম পেজে বন্ধুরা যেভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের কীভাবে ধন্যবাদ দেব, বুঝতে পারছি না।’
কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই যে খারাপ যে একবার খোঁজ পেলে অল্প সময়ের মধ্যেই ওষুধ ও ইনজেকশন ফুরিয়ে যায়। অবনি বলেন, একটিমাত্র ওষুধের দোকানে তাঁরা ইনজেকশনের খোঁজ পেয়েছিলেন। দোকানটি সকাল সাড়ে আটটায় খোলে। মধ্যরাত থেকে ইনজেকশনের জন্য অবনির মামাতো ভাই লাইনে দাঁড়ান। লাইনের সামনের দিকে যে ১০০ জন ছিলেন, তাঁরাই কেবল ইনজেকশন নিতে পেরেছেন।
অবনির মা অমৃতা বলেন, কালোবাজারে এখন ওষুধ বিক্রি শুরু হয়েছে। ১ হাজার ২০০ রুপির ওষুধ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ রুপিতে। তারপরও সেটি আসল না নকল ওষুধ, তার নিশ্চয়তা নেই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবনি যেসব পেজে ওষুধ ও অক্সিজেনের খোঁজ করতেন, সে রকমই একটি পেজ চালান অর্পিতা চৌধুরী (২০)। দিল্লিতে অর্পিতা এবং লেডি শ্রী রাম কলেজের বন্ধুরা অনলাইন ডেটাবেইসের মাধ্যমে ওষুধ, ইনজেকশন ও হাসপাতালের বেডের খোঁজ জানান।
অর্পিতা বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় ও প্রতি মিনিটে সবকিছু বদলে যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট আগে হয়তো জানলাম কোনো হাসপাতালে ১০টি বেড খালি আছে। পাঁচ মিনিট পরেই জানলাম ওই হাসপাতালে আর কোনো বেড খালি নেই।’
অর্পিতা ও তাঁর বন্ধুরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অক্সিজেন, বেড, প্লাজমা ও ওষুধ সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনেক রোগী এভাবে উপকৃত হন। আবার অনেককে হয়তো শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো সম্ভব হয় না।
উত্তর প্রদেশের গোরাখপুরে আদিত্য গুপ্ত নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্বজনের জন্য অক্সিজেন খুঁজছিলেন। ছোট–বড় কোনো হাসপাতালেই অক্সিজেন পাননি তাঁরা। বেশির ভাগ হাসপাতাল জানায়, নিজেরা অক্সিজেন জোগাড় করতে পারলে তাঁরা রোগী ভর্তি করবেন।
হোয়াটসঅ্যাপে খোঁজ করে আদিত্যর পরিবার একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়ে যায়। তবে সেটি ব্যবহারের জন্য কোথাও কনসেনট্রেটর খুঁজে পাননি। কোনো হাসপাতালও তা দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আদিত্যর ভাই মারা যান।