১০ হাজার ফুট উঁচুতে সুড়ঙ্গ সড়ক ‘অটল টানেল’

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির নামে নামকরণ হয়েছে মহাসড়ক সুড়ঙ্গটির
ছবি: এএনআই

১০ হাজার ফুট ওপরে এই মহাসড়ক সুড়ঙ্গ—‘অটল টানেল’। ভারতের হিমাচল প্রদেশের মানালি শহরকে লাদাখের লেহ শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এটি। দুই শহরের মধ্যে ৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব ঘুচিয়েছে এই সুড়ঙ্গ; যাতায়াতকারী মানুষের সময় সাশ্রয় হয়েছে চার ঘণ্টা। বলা হচ্ছে, এত উঁচুতে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাসড়ক সুড়ঙ্গ (হাইওয়ে টানেল)।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির নামে নামকরণ হয়েছে এই মহাসড়ক সুড়ঙ্গ। ছয় বছরের কম সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে বাস্তবে সময় লেগেছে ১০ বছর। এখন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত অটল টানেল।

অটল টানেলের খুঁটিনাটি তথ্য এনডিটিভিকে জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী কে পি পুরাশোথমান। সুড়ঙ্গের ভেতর নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পেয়েছে।

সুড়ঙ্গের ভেতরে ৬০ মিটার পরপর রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা; ৫০০ মিটার পরপর রয়েছে জরুরি বহির্গমন সুড়ঙ্গ। অগ্নিদুর্ঘটনার কথা বিবেচনায় রেখে সুড়ঙ্গের ভেতরে বসানো হয়েছে ‘ফায়ার হাইড্র্যান্ট’। এই পানির কল ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সহজেই আগুন নেভাতে পারবেন।

প্রধান প্রকৌশলী কে পি পুরাশোথমান বলেন, ‘অটল টানেল মানালি শহরকে লেহ শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ১০ হাজার ফুট উঁচুতে এত লম্বা মহাসড়ক সুড়ঙ্গ বিশ্বে আর কোথাও নেই। এই সুড়ঙ্গ মহাসড়ক মানালি ও লেহ শহরের মধ্যে দূরত্ব কমিয়েছে ৪৬ কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় বাঁচবে ৪ ঘণ্টা। আমরা ৬ বছরের কম সময়ে এটির নির্মাণকাজ শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে টানেলটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে লেগেছে ১০ বছর।’

প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দুর্গম এলাকা। সেখানে সুড়ঙ্গ নির্মাণের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নিয়ে গিয়ে সংযোজন করতে হয়েছে। প্রয়োজনমতো সেসব যন্ত্রপাতি খুলে আবার সরিয়ে আনতে হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। এ ধরনের আরও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের।

সাকল্যে এই মহাসড়ক সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটারের কিছু বেশি। প্রস্থ ১০ দশমিক ৫ মিটার। দুই পাশে রয়েছে এক মিটার করে ফুটপাত। সব ঝক্কিঝামেলা কাটিয়ে অটল টানেলকে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে পেরে দারুণ খুশি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রকল্প পরিচালক কর্নেল পরীক্ষিত মেহরা বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানান, অত্যন্ত দক্ষ একদল বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সমন্বিত প্রয়াসে অটল টানেল আলোর মুখ দেখেছে।

বিশেষজ্ঞ দলটির অনেকেই এই মহাসড়ক সুড়ঙ্গের নকশায় পরিবর্তন আনার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছিল লেহ শহরকে সংযুক্ত করার। এ ক্ষেত্রে এই সুড়ঙ্গ হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। আমরা শুধু দুই প্রান্ত থেকে কাজ করতে পেরেছি। অন্য প্রান্তটা ছিল উত্তরে। সেখানকার রোহটাং এলাকায় বছরে মাত্র পাঁচ মাস যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এই সুড়ঙ্গ প্রকল্পটি আমাদের জন্য ছিল সত্যিকারের এক চ্যালেঞ্জ।’