ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং রাজ্য ভেঙে দেওয়ার যে ঘোষণা গতকাল সোমবার এসেছে, তা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পিত। সূত্র বলেছে, ১১ দিন আগে এই ঘোষণার ‘ডেডলাইন’ সম্পর্কে কাশ্মীরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অসন্তোষ দেখা দিলে যাতে তা মোকাবিলা করা যায়, এ জন্য সামরিক শক্তি মোতায়েনের বিষয়টিও জানানো হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, জম্মু-কাশ্মীরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানতেন, এমন ঘোষণা গতকাল আসতে পারে। এ জন্য গতকাল বেলা দুইটা নাগাদ প্রস্তুতিও নেয় কাশ্মীরের প্রশাসন। সেখানকার সরকারের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারে এমন পদক্ষেপ ‘নজিরবিহীন’।
সরকারেরে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ শুরু হয় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) মোতায়েনের মধ্য দিয়ে। গত রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েন করা হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোয়িং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার উড়োজাহাজে করে এই জওয়ানদের সারা দেশ থেকে কাশ্মীরে নেওয়া হয়। আইএএফের এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাবস্থায় যেভাবে সেনা মোতায়েন করা হয় সেভাবে ওই জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে। শতাধিক উড়োজাহাজে করে এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে তাঁদের সেখানে নেওয়া হয়েছে।
এই ঘোষণার দেওয়ার আগে রোববার রাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রীনগরের বিভিন্ন স্থানের এই সেবা বন্ধ করা হয় রোববার বেলা ১১টা থেকে। আর মুঠোফোন সেবা বন্ধ করা হয় গতকাল ভোর চারটার দিকে। এ ছাড়া টেলিফোন নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর কারণ খুব পরিষ্কার। তথ্যের আদান-প্রদান বন্ধ করা এবং সহিংসতা ঠেকানো। তবে নিরাপত্তা বাহিনী যাতে বিপাকে না পড়ে, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বাহিনীর জন্য স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ৬০ জন অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে মোতায়েন করা হয়েছিল। তাঁদের ‘ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তাব্যবস্থায় সহযোগিতার জন্য তাঁদের সেখানে নেওয়া হয়। এ জন্য ছয়টি অস্থায়ী কারাগারও তৈরি করা হয় কাশ্মীরে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত জম্মু-কাশ্মীর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছার পর অমরনাথ তীর্থযাত্রীরা এবং পর্যটকেরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেলে সেখানকার হোটেল ও অতিথিশালাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।