ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্র। এ রাজ্যের রাজনীতিতে চলছে টালমাটাল অবস্থা। সেখান জোট সরকার পতনের মুখে পড়েছে। কারণ, ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে একনাথ শিন্ডের পক্ষ। তাদের দাবি, দলের বিধায়কদের দুই–তৃতীয়াংশ সমর্থন আছে তাদের দিকে। এরই মধ্যে শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত দাবি করেন, শিন্ডেপক্ষের ২০ বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দল।
ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, বিদ্রোহী শিবসেনা নেতা শিন্ডের সঙ্গে বর্তমানে ৩৪ জন শিবসেনা বিধায়ক আছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শিবসেনার আরও কয়েকজন বিধায়ক গিয়ে উঠেছেন আসামের রাজধানী গুয়াহাটির র্যাডিসন ব্লু হোটেলে। এর ফলে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সমর্থনে থাকা বিধায়কদের সংখ্যা আরও কমল। এ হোটেলে আছেন শিবসেনা নেতা বিদ্রোহী একনাথ শিন্ডে। তাঁর সঙ্গে শিবসেনা ও স্বতন্ত্র কয়েকজন সদস্য আছেন।
সঞ্জয় রাউত আজ সকালে দাবি করেন, শিন্ডের পক্ষের ২০ জন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দল। শিন্ডের পক্ষকে ধাক্কা দিতে চায় শিবসেনা। তবে সঞ্জয় রাউতের এ দাবির মধ্যেও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে শিন্ডেপক্ষ। দলের দুই–তৃতীয়াংশ সমর্থনের খুব কাছেই তারা।
এদিকে দলের দুই–তৃতীয়াংশ সমর্থন দেখাতে রাজ্যপালের কাছে সময় চেয়েছেন একনাথ শিন্ডে। সেখানে তিনি নিজের সমর্থনে থাকা দলের সদস্যদের নামের তালিকা দেখাতে পারেন। এরপর রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলতে পারেন। উদ্ধব তা করতে ব্যর্থ হলে বিজেপির সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করতে পারেন একনাথ শিন্ডে। বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিন্ডে বলেন, তিনি শিবসেনার ৫৫ বিধায়কের মধ্যে ৪২ জনের সমর্থন পাবেন। তাঁর কথায়, ১৩ জন ছাড়া বাকি সবাই চলে আসবেন।
এদিকে এখন রাজ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, গুয়াহাটির হোটেলে আসলে কতজন আছেন? ভারতের গণমাধ্যমগুলোয় বলা হচ্ছে, বর্তমানে শিন্ডের পক্ষে ৩৮ শিবসেনা বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের প্রতি সমর্থন আছে মাত্র ১৬ জন বিধায়কের। একজন বিধায়ক এখনো মনস্থির করতে পারেননি। ৫৫ বিধায়কের দলে দলত্যাগবিরোধী আইন এড়াতে ৩৭ জন বিধায়কের প্রয়োজন ছিল একনাথের। সেই সংখ্যা থেকে একজন বিধায়ক বেশি আছেন বলে শিন্ডের দাবি।
বাল ঠাকরের ভবনে মুখ্যমন্ত্রী
এরই মধ্যে মুম্বাইয়ের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। তিনি গতকাল বুধবার বান্দ্রায় শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের বাসভবনে উঠেছেন। এরপরই মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও উঠল প্রশ্ন।
এর আগে কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে বিদ্রোহ করিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। এবার মহারাষ্ট্রে এমনটাই ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
উদ্ধব ঠাকরে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে আসলে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের একটা বার্তা দিতে চাইছেন তিনি। বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, বাল ঠাকরের ব্যাটন তাঁর হাতেই। ছেলে হিসেবে তাঁর নীতি মেনে চলার দায়িত্বও নিজের কাঁধেই তুলে নিতে চান।
আজই সকালে আসাম পৌঁছান শিবসেনার আরও কয়েক বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বিরোধিতাকারী একনাথ শিন্ডের দল ক্রমেই ভারী হচ্ছে। এতে সংকটে পড়তে যাচ্ছে মহাবিকাশ অঘাড়ি সরকার। ওই তিন বিধায়কের কারণে উদ্ধব ঠাকরের সমর্থনে থাকা বিধায়কদের সংখ্যা আরও কমল; পাশাপাশি আরও শক্তিশালী হলো শিন্ডের পক্ষ। বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিন্ডের দাবি, শিবসেনার ৫৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৪২ জনের সমর্থন আছে তাঁর দিকে। আর মাত্র একজনের সমর্থন পেলেই সরকার গঠনের মতো অবস্থায় যাবেন তাঁরা। বিজেপির ১০৫ বিধায়ক ও শিন্ডের ৪২ হলে সরকার গঠন সম্ভব।
বিজেপিকে সমর্থন করতে পারেন শিন্ডে
বিজেপির কাছে বর্তমানে ১০৫ জন বিধায়ক আছেন। ২৮৭ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১৪৫ আসন। শিন্ডের দাবি, তাঁর সঙ্গে বর্তমানে অন্তত ৪২ জন বিধায়ক আছেন। এর মধ্যে শিবসেনার ৩৪ জন আছেন।
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বর্তমানে বিজেপির ১০৫, শিবসেনার ৫৬, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এসসিপি) ৫৪, কংগ্রেসের ৪৪ আসন আছে। বাকিরা অন্য দল ও স্বতন্ত্র সদস্য। এখন সেখানে শিবসেনা, এসসিপি ও কংগ্রেসের জোট সরকার রয়েছে।
একনাথ শিন্ডেকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি। আড়াই বছর আগে এই একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এনসিপির অজিত পাওয়ারকেও। নতুন সরকার গঠন করা হলে শিন্ডের পক্ষকে ৯টি মন্ত্রণালয় দিতে পারে বিজেপি। আগেরবার অজিত পাওয়ারকেও এই একইসংখ্যক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস, এনডিটিভি