‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা শুরু কংগ্রেসের
কংগ্রেসের পতাকা উড়িয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে বৃহস্পতিবার সকালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী শুরু করলেন ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। টানা পাঁচ মাস ধরে ১২টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ৩ হাজার ৫৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রাহুল ও তাঁর সঙ্গীরা পদব্রজে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর পৌঁছে যাত্রা শেষ করবেন। যাত্রাপথে তাঁদের একটাই বার্তা, ঘৃণা ও হিংসা যা ভারতকে বিভক্ত করে দিচ্ছে, তার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত অর্থে বহুত্ববাদ ফিরিয়ে এনে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা।
এই যাত্রাপথে রাহুল ও বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাছাই করা শতাধিক যাত্রী তাঁবু খাঁটিয়ে রাত যাপন করবেন। যাত্রাপথে তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। বিজেপি ও আরএসএসের ‘বিভেদকামী ও ঘৃণার নীতির’ বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ করবেন। বোঝাবেন বহুত্ববাদ অটুট রাখা দেশের একতাবদ্ধ থাকার জন্য কতটা জরুরি। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এই যাত্রার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলেন, শতাধিক বছর ধরে কংগ্রেস যে নীতি ও আদর্শে বিশ্বাস রেখে এসেছে, তা আজ রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশের মানুষকে সেই আদর্শ রক্ষার কথা বোঝানোর দায় কংগ্রেসেরই। রাহুল সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, কংগ্রেসকে জোটবদ্ধ রাখাও এই যাত্রার অন্যতম লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ু থেকে যাত্রা শুরুর সময় জনগণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ চোখে পড়েছে। গত বুধবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করান রাহুলের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা যায়, শত শত মানুষ রাহুলের সঙ্গে পা মিলিয়ে হাঁটছেন। রাস্তার দুই পাশে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষকে যাত্রীদের উদ্দেশে ফুল ছুড়তে দেখা যায়।
এই যাত্রা কংগ্রেসের অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণে কতটা সহায়ক হবে, সেই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির নেতারা কটাক্ষ করে বলছেন, রাহুল বরং নিজের দলকে জোড়ার কাজ করুন। দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সতত ব্যস্ত। কেউ কেউ বলছেন, যারা দেশভাগের জন্য দায়ী, তারাই এখন দেশ জোড়ার কথা বলছে। এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘ এই যাত্রাপথ তৈরি করা হয়েছে কোন যুক্তিতে।
প্রশ্নটি উঠছে কারণ, দেশের অর্ধেকের বেশি অঞ্চলে রাহুলেরা যাচ্ছেন না। যেমন ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ডসহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল। রাহুল যাবেন না বিজেপিশাসিত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও গুজরাটেও। ঘৃণার বিরুদ্ধে কথা বলবেন অথচ গুজরাট যাবেন না, সেটাও বিস্ময়কর। কেননা, গুজরাটকে কংগ্রেস ঘৃণার আঁতুড় ঘর মনে করে। গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে বছর শেষে বিধানসভার ভোট। কংগ্রেসশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড়েও তিনি যাবেন না। কাজেই প্রশ্ন উঠছে, এই কর্মসূচি কতটা আন্তরিক, কতটা বাধ্যতামূলক, কতটা প্রকৃত তাগিদ তা নিয়ে। রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকা সব সময় জরুরি। রাহুলের বিরুদ্ধে অপেশাদারত্বের যে অভিযোগ বিরোধীরা তোলেন, দলেরও অনেকে যে সমালোচনা নিতান্তই অবান্তর বলে মনে করেন না, এই পদযাত্রার উদ্দেশ্য তাদের জন্য কতটা, সেই সংশয়ও বিভিন্ন মহলে রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই কর্মসূচি নিজেকে সক্রিয় দেখানোর ‘চেষ্টা’ কি না, তা নিয়েও।
অবশ্য এই পদযাত্রার অন্য একটি দিক গুরুত্বপূর্ণ। রাহুলের পাশে সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছেন দেশের দেড় শতাধিক সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীরা। তাঁরা সবাই রাহুলের সহযাত্রী। লক্ষণীয়, এসব সংগঠন একটা সময় কংগ্রেসের প্রবল বিরোধিতা করেছে। ইউপিএ সরকারের আমলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছে। অরুণা রায়, মেধা পাটকর, সঈদা হামিদ, শরদ বেহর, পি ভি রাজাগোপাল, বেজওয়াদা উইলসন, দেবানুর মহাদেব, জি এন ডেভি কিংবা যোগেন্দ্র যাদব এবার পদযাত্রী। প্রত্যেকেই বলেছেন, সময় এসেছে বিজেপির ‘একদর্শী কর্তৃত্ববাদ ও স্বৈরতান্ত্রিকতার’ বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার। কারণ, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ। তাঁদের কথায়, এই যাত্রা ‘ভাঙা’র বিরুদ্ধে ‘গড়া’র মানসিকতাকেই প্রকট করবে।