ইরানে বন্দুকধারীর হামলায় কর্নেল নিহত
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার তেহরানে নিজ বাড়ির সামনে গাড়িতে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন এ কর্মকর্তা। খবর বিবিসির।
নিহত কর্মকর্তার নাম সায়াদ খোদাই। তিনি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডে কর্নেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। গতকাল মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্দুকধারী তাঁর গাড়িতে গুলি করে পালিয়ে যায়। গাড়িটিতে পাঁচবার গুলি ছোড়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি গাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় খোদাইয়ের মৃতদেহ পড়ে আছে। তাঁর গায়ে তখনো সিটবেল্ট লাগানো।
এখন পর্যন্ত গতকালের হামলার ঘটনায় কেউ দায় স্বীকার করেনি। বন্দুকধারীদের খুঁজতে অভিযান চলছে। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সম্পাদক সেবাস্তিয়ান আশার বলেন, ২০২০ সালের পর এটিই ইরানে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা। ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষস্থানীয় এক পরমাণুবিজ্ঞানী হত্যার শিকার হন।
কর্নেল খোদাই রেভল্যুশনারি গার্ডের ছায়া বৈদেশিক শাখা কুদস বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য। কুদস বাহিনী মূলত বিদেশে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে থাকে, এ বাহিনী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেয়। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হামলার জন্যও এ বাহিনীকে দায়ী করে থাকে তারা।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ খতিবজাদেহ বলেছেন, ইরানের শত্রুরাই কর্নেল খোদাইকে হত্যা করেছে। বিশ্বের দাম্ভিক দেশগুলোর সহযোগী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এ কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। দাম্ভিক দেশ বলতে মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের ইঙ্গিত করেছেন সাইদ।
এর আগে এ ধরনের প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল ইরান। হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি গুপ্তচরদের একটি দলকে গ্রেপ্তার করেছে রেভল্যুশনারি গার্ড। এ ব্যাপারে ইসরায়েলের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কুদস বাহিনীর যেসব নেতা নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে খোদাই দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
২০২০ সালে ইরাকে বিমান হামলায় ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। কুদস বাহিনীর প্রধান হিসেবে ইরানের সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
একই বছর, পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে তেহরানে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইরানের দাবি, রিমোট–নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র ব্যবহার করে তাঁকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ফাখরিজাদেহ খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। বেশ কয়েকজন দেহরক্ষী সব সময় তাঁকে সুরক্ষা দিতেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ফাখরিজাদেহর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইরান সরকারের দাবি, তারা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে থাকে।