
পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ফল গতকাল বুধবার রাত দুইটার পর থেকে আটকে আছে। ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার পেছনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক রিপোর্টিং ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ফল আসতে দেরি হচ্ছে। রয়টার্সের খবর।
ডন অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ কেন্দ্রের ভোট গণনা করা হয়েছে। এতে সাবেক ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ১১৩ আসনে এগিয়ে। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) দল ৬৪টি আসনে এগিয়ে। বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৪৩টি আসনে এগিয়ে, মুত্তাহিদা মজলিশ আমল (এমএমএ) এগিয়ে রয়েছে ৯টি আসনে এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ৫টি আসনে এগিয়ে।
ফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার কারণে পিএমএল-এন ও অন্তত আরও চারটি দলের সমর্থকেরা ভোট গণনায় জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন।
পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফ বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকা দলীয় প্রতিনিধিদের বের করে দিয়েছে সেনারা।
গণনা চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ অভিযোগ করেন, ‘এটি নিখুঁত জালিয়াতি। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের জনগণের মতামতকে অপমান করা হচ্ছে, যা অসহনীয়। আমরা এই ফল পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। এটি পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বড় আঘাত।’

এর জবাবে নির্বাচন কমিশনের সচিব বাবর ইয়াকুব আজ সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ইলেকট্রনিক রিপোর্টিং ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ফল আসতে দেরি হচ্ছে। এখন হাতে ব্যালট গণনা চলছে। রাত দুইটার পর থেকে আর কোনো আসনের ফল আসেনি।
ইয়াকুব বলেন, ফল ঘোষণার দেরির পেছনে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা চাপ নেই। দেরির কারণ হলো ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া।
তবে কখন পূর্ণাঙ্গ ফল পাওয়া যাবে, তা তিনি বলতে পারেননি। যতটা দ্রুত সম্ভব তা করা হবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সরদার মোহাম্মদ রাজা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘এই নির্বাচন ১০০ ভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। এতে কোনো কালিমা নেই। আপনার কেন মনে করছেন না যে এই পাঁচটি রাজনৈতিক দলের ভুল ধারণা।’
দলের পক্ষ থেকে বিজয়ের ঘোষণা দেওয়া না হলেও এরই মধ্যে ইমরান খানের দলের মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী টুইট করে জাতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইমরান খানকেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিনন্দন জানান।
দেশটির ইতিহাসে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রথমবারের মতো সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে পরের বৈধ সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা তুলে দেওয়া গেলে সেটি হবে ইতিহাস।
দেশটির ৭০ বছরের ইতিহাসে প্রায় অর্ধেক সময় প্রকাশ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল সেনাবাহিনী। অন্য সময় কলকাঠি নেড়েছে আড়ালে-আবডালে। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ পিএমএল-এনের সরকার। নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুর্নীতির মামলায় আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান তিনি। শুধু তা-ই নয়, তিনি রাজনীতিতে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দলীয় প্রধানের পদও হারান। তিনি সরে দাঁড়ান, তবে সরকার ভেঙে পড়তে দেননি। নওয়াজ এই পরিস্থিতির জন্য ক্রমাগত সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছেন।