চিকিৎসা ছাড়াই এইডস থেকে সেরে উঠলেন ৩০ বছরের নারী
প্রাণঘাতী এইচআইভি বা এইডসে সংক্রমিত হওয়ার পর কোনো চিকিৎসা ছাড়াই আর্জেন্টিনার এক নারী সুস্থ হয়েছেন। নিজের রোগ প্রতিরোধ শক্তির কল্যাণে তাঁর শরীর থেকে ভাইরাসটির উপসর্গ চলে গেছে। বিশ্বে দ্বিতীয়বার এইডস থেকে আরোগ্য পাওয়ার এমন ঘটনা ঘটল। এক গবেষণা নিবন্ধে এসব দাবি করা হয়েছে।
২০১৩ সালে ওই নারীর দেহে হিউম্যান ইমিউনো ডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) শনাক্ত হয়। তিনি আর্জেন্টিনার এসপারেনজা শহরের বাসিন্দা। তাঁর বয়স ৩০ বছর। নাম-পরিচয় না জানালেও গবেষকেরা শহরের সঙ্গে মিল রেখে ওই নারীকে ‘এসপারেনজা রোগী’ নামে ডাকেন। ইংরেজিতে এসপারেনজা অর্থ আশা।
এইডস নিয়ে মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল নেতিবাচক ধারণার কারণে ওই নারী তাঁর নাম প্রকাশ করতে চান না। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘সুস্থ থাকাটা উপভোগ করি। আমার একটি সুস্থ পরিবার আছে। আমাকে ওষুধ খেতে হয় না এবং কিছুই হয়নি এমন জীবন যাপন করি। এটাই তো একটা বিশেষ সুবিধা।’
এ নিয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা বলেছেন, ওই নারীর ১০০ কোটির বেশি কোষ পরীক্ষা করেছেন তাঁরা। দীর্ঘ সময় নিয়ে অত্যন্ত পরিশীলিত ও সংবেদনশীল পরীক্ষা চালিয়েও ওই নারীর শরীরে এইচআইভির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
বিশ্বে এখন আনুমানিক তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রাণঘাতী ব্যাধি এইডসে আক্রান্ত। গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের এই গবেষণা এইডসে আক্রান্ত এসব মানুষ ও এইচআইভি থেকে আরোগ্যের জন্য গবেষণা খাতে আশা জাগাবে। প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত হওয়ার ঘটনা এটি দ্বিতীয়।
র্যাগন ইনস্টিটিউট অব বোস্টনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জিউ ইয়ুই এবং আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরসের আএনবিআইআরএস ইনস্টিটিউটের নাটালিয়া লাউফা যৌথভাবে এই গবেষণা করেন। জিউ ইয়ুই বলেন, ‘এটি সত্যিই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অলৌকিক একটি ঘটনা এবং এর মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এইচআইভি গবেষক স্টিভেন ডিকস বলছেন, ‘এটা কীভাবে ঘটল, সেটা এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে আমাদের। এটা কীভাবে ঘটল এবং চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে কীভাবে প্রত্যেকের মধ্যে এটা করা যায়, তার উপায় খুঁজতে হবে।’