টিকা নিয়ে নিষ্ক্রিয়তায় তোপে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো।ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের টিকা পেতে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সমালোচকেরা বলছেন, দেশটিতে করোনায় মৃত্যু যখন আবার বাড়তে শুরু করেছে, তখন সুসংহত টিকা কর্মসূচি গ্রহণে তাঁর ব্যর্থতা ‘আত্মহত্যামূলক অবহেলা’র শামিল। দ্য গার্ডিয়ান এ খবর প্রকাশ করেছে।

লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলে করোনায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮১ হাজার মানুষ মারা গেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো করোনার ভয়াবহতাকে বরাবরই খাটো করে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তাঁর ভাষায়, করোনা মহামারি ‘একটি ছোটখাটো ফ্লু’।

করোনা মহামারির বাস্তবতা থেকে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেকে যে কতটা বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, সরকারের নিষ্ক্রিয়তা সেটিই দেখাচ্ছে। আমরা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, তা সরকার এখনো অনুধাবন করতে পারেনি।
নাটালিয়া প্যাস্টারনাক, কোশ্চেন অব সায়েন্স ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে এখন করোনার দ্বিতীয় দফা ঢেউ শুরু হয়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকলেও টিকা নিয়ে নিজের অবস্থান বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছে না সরকার। ২১ কোটির বেশি মানুষের দেশটিতে টিকার বিষয়ে সরকার তার সব মনোযোগ অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার দিকে নিবদ্ধ করে রেখেছে।

আবার বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল এখনো ফাইজারের টিকা পেতে কোনো চুক্তি করেনি। চীনের পরীক্ষামূলক টিকা করোনা ভ্যাকের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলসোনারো সরকার। অনেকেরই তাই সন্দেহ, তাঁর এই নিষ্ক্রিয়তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় ব্রাজিলের আস্থা রাখার যুক্তি রয়েছে। সমস্যা হলো, শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকার দিকে তাকিয়ে থাকা ও অন্যদের সঙ্গে চুক্তি না করা। কেননা, অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সরকার যদি ১০ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার চুক্তিও করে, তবু তা পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট হবে না।

ব্রাজিলের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বলসোনারোর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সাওপাওলোর ডানপন্থী গভর্নর জোয়াও ডোরিয়া চীনের টিকা কিনতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ডোরিয়াকে কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ না দিতেই চীনের টিকার প্রতি অবহেলা দেখাচ্ছেন বলসোনারো। ২০২২ সালে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর এমন কৌশলে টিকা পেতে বিলম্ব হলে ব্রাজিলে নেহাতই আরও মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। দেশটির বিজ্ঞান ও গবেষণাবিষয়ক অলাভজনক সংগঠন কোশ্চেন অব সায়েন্স ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা নাটালিয়া প্যাস্টারনাক এ বিষয়ে বলেছেন, ‘করোনা মহামারির বাস্তবতা থেকে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেকে যে কতটা বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, সরকারের নিষ্ক্রিয়তা সেটিই দেখাচ্ছে। আমরা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, তা সরকার এখনো অনুধাবন করতে পারেনি।’

প্যাস্টারনাক আরও বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় ব্রাজিলের আস্থা রাখার যুক্তি রয়েছে। সমস্যা হলো, শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকার দিকে তাকিয়ে থাকা ও অন্যদের সঙ্গে চুক্তি না করা। কেননা, অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সরকার যদি ১০ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার চুক্তিও করে, তবু তা পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট হবে না।