মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রাজিল
জিকা ভাইরাসের জন্য দায়ী এডিস মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ব্রাজিল। দেশটির প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বলেছেন, এর আওতায় দেশের হাজার হাজার সেনাসদস্য ও সরকারি কর্মচারী বাড়ি ও কর্মস্থলে মশা নিধনে অংশ নেবেন। খবর বিবিসির।
এখন পর্যন্ত দুই আমেরিকাতেই জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে ব্রাজিলেই। দেশটিতে কয়েক শ শিশু অস্বাভাবিক ছোট মাথা ও ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মেছে, যার জন্য জিকা ভাইরাস দায়ী বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাই বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা আতঙ্কে রয়েছেন। আর প্রধানত এডিস মশার মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
ব্রাজিলের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট রুসেফ জানান, কাল শনিবার জাতীয় উদ্বুদ্ধকরণ দিবস পালন করবে ব্রাজিল। এই দিবসের আওতায় হাজার হাজার সেনাসদস্য ও সরকারি কর্মচারী নিজেদের বাড়ি ও কর্মস্থলে মশা নিধন করবেন। কারণ, এ ধরনের মশা সাধারণত লোকজনের আবাসস্থলের আশপাশেই বংশবৃদ্ধি করে থাকে। রুসেফ বলেন, এটা এমন একটি লড়াই যাতে ‘পরাজিত হওয়া চলবে না।’ তাঁর মতে, যেহেতু বিজ্ঞান এখনো জিকাবিরোধী টিকা আবিষ্কার করতে পারেনি, সেহেতু এই রোগ মোকাবিলার একমাত্র পদক্ষেপ হচ্ছে মশার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠভাবে লড়াই করা।
নানাভাবে ছড়াচ্ছে: এদিকে দিন যতই যাচ্ছে, নানাভাবে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর খবর মিলছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক খবরে গত বুধবার বলা হয়, ব্রাজিলে এমন দুটি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, যেখানে রক্তদানের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সাও পাওলোর শিল্পসমৃদ্ধ কাম্পিনাস শহরে ওই দুজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে এমন একজনকে পাওয়া যায়, যাঁর দেহে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
জিকা এডিস মশাবাহিত হওয়ায় শীতপ্রধান দেশগুলোতে এ ভাইরাসের ঝুঁকি কম বলে ভাবা হচ্ছিল। কারণ, এডিস মশার উৎপাত ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতেই বেশি। কিন্তু এসব ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, জিকার প্রাদুর্ভাব থেকে কেউই ঝুঁকিমুক্ত নয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মুখপাত্র গ্রেগরি হার্টল গত বুধবার জেনেভায় বলেন, ‘প্রায় শতভাগ ঘটনা’ই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ালেও যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনাটি নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমন ঝুঁকি কতটা, যা বুঝতে হবে। এর আগে সোমবার সংস্থাটি জিকা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করে। আর দক্ষিণ আমেরিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা সমন্বিতভাবে জিকাবিরোধী তৎপরতা চালানোর উপায় খুঁজতে বুধবার উরুগুয়েতে জরুরি বৈঠক করেছেন।
গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে ঝুঁকি বেশি: বার্তা সংস্থা এপির এক খবরে বুধবার বলা হয়, যে এলাকায় উষ্ণতা যতটা বেশি, সে এলাকায় জিকা সংক্রমণের আশঙ্কাও বেশি। বিজ্ঞানীরা তেমনটাই বলছেন। জিকায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ব্রাজিলীয় শহর রেসিফিতে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে রেকর্ড মাত্রায় তাপমাত্রা ছিল। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসের পতঙ্গবিজ্ঞানী বিল রেইসেন বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে এডিস মশার বংশবৃদ্ধিও হয়। এই মশাই জিকা, ডেঙ্গুজর ও অন্যান্য রোগের বাহক।