হাজারো কণ্ঠে 'আমিই ফিদেল'

কিউবার সান্তিয়াগোতে বিপ্লবী প্রয়াত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর স্মরণসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। ছবি: রয়টার্স
কিউবার সান্তিয়াগোতে বিপ্লবী প্রয়াত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর স্মরণসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। ছবি: রয়টার্স

‘ফিদেল কাস্ত্রোর কোনো মূর্তি বানানো হবে না। শহরের গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের নামকরণও হবে না তাঁর নামে। এটিই ফিদেলের ইচ্ছা ছিল।’ বড় ভাইয়ের এই ইচ্ছার কথা যখন কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো জানাচ্ছিলেন, তখন উপস্থিত জনতা বলে উঠল, ‘আমিই ফিদেল’।

রাউল কাস্ত্রো বলেন, এসব কারণেই ফিদেল নিজেই একটি দৃষ্টান্ত। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কিউবার সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবা শহরে কাস্ত্রোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে এই সভায় বক্তব্য দেন ফিদেলের ভাই ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো।

রাউল কাস্ত্রো ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: রয়টার্স
রাউল কাস্ত্রো ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: রয়টার্স

রাউল বলেন, সব বাধা ও হুমকিকে জয় করে কিউবায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি অবিচল থাকবেন।

নয় দিনের শোক পালন শেষে স্থানীয় সময় আজ রোববার কাস্ত্রোর দেহভস্ম আনুষ্ঠানিকভাবে সান্তা ইফিগেনিয়া সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হবে। এই সমাধিক্ষেত্রেই ১৯ শতকের স্বাধীনতার নায়ক হোসে মার্তিকে সমাহিত করা হয়।

স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রিয় নেতার ছবি হাতে এসেছেন তাঁরা। ছবি: রয়টার্স
স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রিয় নেতার ছবি হাতে এসেছেন তাঁরা। ছবি: রয়টার্স

গত ২৮ নভেম্বর হাভানার রেভল্যুশন স্কয়ারে শোকসভা থেকে কাস্ত্রোর ভস্মাধার কিউবার বিভিন্ন প্রান্তে বয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবে কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী যে পথে হাভানা পৌঁছেছিল, তার উল্টো পথ অনুসরণ করে দেহভস্ম।

সভায় অংশগ্রহণকারী আনসেল হেচাভারিয়া নামের একজন বলেন, ‘ফিদেল মারা যাওয়া মানে এই নয় যে আমরা নিশ্চুপ হয়ে যাব। আমরা ফিদেলের উত্তরাধিকারী।’

প্রিয় নেতার ছবি নিয়ে শোকাহত এক নারী। ছবি: রয়টার্স
প্রিয় নেতার ছবি নিয়ে শোকাহত এক নারী। ছবি: রয়টার্স

কিউবাজুড়ে কাস্ত্রোর বাণীসংবলিত বিলবোর্ড ও প্রচারপত্র টাঙানো হয়েছে। তবে সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো ভবনে কাস্ত্রোর কোনো ছবি রাখা হয়নি। তাঁর কোনো মূর্তিও নেই।

কিউবার রাজধানী হাভানার রেভল্যুশন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত শোকসভায় ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া ও বলিভিয়ার নেতারাও যোগ দেন।

স্মরণসভায় আসা তানিয়া মারিয়া জিমেনেজ বলেন, ‘আমরা সবাই ফিদেলকে ভালোবাসি। ফিদেল আমাদের কাছে বাবার মতো। তিনি আমাদের জীবনের পথকে সহজ করে দিয়েছেন। জনগণ তাঁকে অনুসরণ করবে।’

রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে কথা বলছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ও লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। ছবি: রয়টার্স
রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে কথা বলছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ও লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। ছবি: রয়টার্স

গত ২৫ নভেম্বর ৯০ বছর বয়সে মারা যান ফিদেল কাস্ত্রো।

কাস্ত্রোর দাবি, ৬৩৪ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁকে। কখনো আততায়ী পাঠিয়ে, কখনো খাবারে বিষ প্রয়োগ করে। সবগুলোর পেছনে পরাক্রমশালী ও শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর কারসাজি বলে অভিযোগ ছিল তাঁর। সিআইএ দু-একটি হত্যাচেষ্টার কথা পরবর্তীকালে স্বীকারও করেছে। অতিসাবধানী চলাফেরা বাঁচিয়ে দিয়েছে কাস্ত্রোকে।

ফিদেল কাস্ত্রোর দেহভস্ম নিয়ে পৌঁছেছে বিশেষ গাড়ি। ছবি: রয়টার্স
ফিদেল কাস্ত্রোর দেহভস্ম নিয়ে পৌঁছেছে বিশেষ গাড়ি। ছবি: রয়টার্স

১৯৫৯ সালে যে গেরিলা অভিযানে কিউবার মার্কিন মদদপুষ্ট বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো, সেই গেরিলা দলে তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন আর্জেন্টিনার আরেক বিপ্লবী চে গুয়েভারা। এরপর ৪৯ বছর ধরে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা শাসন করেছেন তিনি। মৃত্যুর পর প্রচারিত সংবাদে তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসকদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চশমাতেও কাস্ত্রোকে স্মরণ। ছবি: রয়টার্স
চশমাতেও কাস্ত্রোকে স্মরণ। ছবি: রয়টার্স

অন্ত্রের ক্যানসারে অস্ত্রোপচারের পর ২০০৬ সালে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ফিদেল কাস্ত্রো। এরপর রাজনীতি থেকে দূরে একপ্রকার নিভৃত জীবন যাপন করেছেন। বছরে এক কি দুবার জনসমক্ষে এসে ভাষণ দিতেন।