অকাজের কাজী

স্বদেশ থেকে আসা দুঃসংবাদ আর কিছু মানুষের আচার–আচরণ নিয়ে আমাদের যাপিত জীবন। দেশ থেকে সংবাদ আসে, ছেলেধরা সন্দেহে নারীকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ধর্ষণের সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। পাষণ্ডদের তাণ্ডব থেকে রেহাই পাচ্ছে না কমবয়সী, মাঝবয়সী, বৃদ্ধা—সবই ধর্ষণের তালিকায় আছে।
দেশ থেকে আসেন স্বদেশিরা। এদের কেউ কেউ আমেরিকায় এসে প্রথমেই জানতে চান, এখানে কী কী সুবিধা আছে। বয়স্ক ভাতা আছে কি না। হোম কেয়ার পাওয়া যায় কিনা। ফুড স্টাম্প নেওয়া যাবে কি না। স্বাস্থ্য সুবিধা কী কী পাওয়া যাবে? সব সুবিধা গ্রহণ করেন। তারপর বসান গল্পের আসর। মন্তব্য করেন, আমেরিকা দেশটা কত জঘন্য!
জিজ্ঞেস করুন, কেন জঘন্য?
—বলেন, বাইরে গেলেই নারীদের চালচলন পছন্দ হয় না। কেমন কাপড়–চোপড় পরে! কেমন চলাফেরা করে!!
তাদের বলি, আপনাকে এসব যন্ত্রণা দেয় নাকি?
তাহলে?—এই যে তারা খাটো কাপড় পরে।
বলি, আপনারে এখানে এসব দেখতে আসতে বলছে কে? এটা যে মক্কা শরীফ নয়—এ কথা আপনাকে কেউ বলেনি?
এবারে উত্তর দেন, ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছে।
বলি, এখন তো বহুত বেড়ানো হলো। চলে গেলেই পারেন
এবারে বলেন, বাকি ছেলেমেয়েদের জন্যও অ্যাপ্লাই করছি। যাব কোথায়?
বলি, অ্যাপ্লাই করছেন কেন?
বলেন, নাতি–নাতনিগুলো ভালো লেখাপড়া করবে। ভালো জীবনের সুযোগ পাবে।
আহারে! জেনেশুনে নিজের সুবিধার জন্যই তো এখানে এসেছেন। এ দেশ থেকে, এ সমাজ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। এখানকার বদনাম করতে মনে বাঁধে না?
—বলেন ধর্ম নিয়ে মগ্ন থাকি। আমেরিকা দেশটা এত খারাপ দেশ!
দুনিয়ার সব রেখে, দেখে দেখে আমেরিকার মেয়েদের ফেসবুক বন্ধু তালিকায় নেবে বা ফলো করবে। তারপর সেই মেয়ের দেয়ালে গিয়ে খিস্তিখেউর করবে। এরা জানেই না, এসব মেয়ের কর্ম আর প্রয়াসের খবর। আমেরিকার কর্মপাগলদের সময় নেই এসব ফালতু মানুষের দিকে তাকানোর! অ্যাটেনশন নিতে কিছু পুরুষ হেন নিচে নাই, যেখানে নামতে পারে না।
ধর্মীয় ওয়াজে নারী। গল্পে নারী, বদনামে নারী, প্রশংসায় নারী। নারী নারী নারী—অন্তরগুলো যেন নারী দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী। একটা দেশের মান সম্মান, একটা ধর্মকে তার অনুসারীরা কতটা নিচে নামাতে পারে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের কিছু লোক। হ্যাঁ, আমার নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশর কিছু মানুষ। কোনো দিন কি দেশ কিছু কর্মঠ মানুষ পাবে, যারা কাজে সময় ব্যয় করবে? অকাজে নয়!