আশাবাদী হওয়ার উপায়

আশাবাদী মানুষ কারা? যেসব মানুষ জীবনে বিভিন্ন সমস্যা/ব্যর্থতা/দুর্ভাগ্যের কারণে জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকেন, সেসব মানুষই প্রকৃতপক্ষে আশাবাদী। মানুষ যে শুধু জন্ম থেকেই আশাবাদী হয়, তা নয়। নিজ চেষ্টা, জ্ঞান আর অধ্যবসায়ই মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। চলুন প্রথমেই দেখে নিই আশাবাদী মানুষের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সাধারণত-
১. ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন।
২. নিজের কাজে বিশ্বাস রাখেন; তবে অতি বিশ্বাস নয়।
৩. উদ্বিগ্ন হন না। তাঁরা যা করতে পারেন, তাতে মনোযোগ দেন। যা তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা নিয়ে তাঁরা তেমন মাথা ঘামান না।
৪. সাহসী হন। কাজেই তাঁরা সহজেই ভয়কে জয় করতে পারেন।
৫. অধ্যবসায়ী হন। তাই, তাঁরা ব্যর্থতার হতাশায় ভেঙে পড়েন না।
৬. হাসি-খুশি থাকেন। ফলে তাঁরা সাধারণত বিষাদগ্রস্ত থাকেন না।
৭. অন্যের সাফল্যে খুশি হন; গর্ববোধ করেন।
৮. রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
৯. দৈনন্দিন জীবনে রুটিন মেনে চলেন এবং
১০. দুশ্চিন্তায় ভেঙে না পড়ে মুক্তির উপায় খোঁজেন।

একজন মানুষ আশাবাদী কি না তা খুব সহজেই বোঝা যায় অন্যের প্রতি তাঁর চিন্তা, ধারণা ও আলাপ-আলোচনায়। আশাবাদী মানুষ সাধারণত—
১. কথা কম বলেন, অন্যের কথা শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।
২. অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেন।
৩. কাউকে ছোট মনে না করে সবার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেন।
৪. অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহী করেন।
৫. কাউকে দোষারোপ না করে নিজ দায়িত্বে কাজ করেন।
৬. অধীনস্থ বা ছোটদের ব্যর্থতার দায়ভার নেন।
৭. নারী-পুরুষ সবাইকে সম্মান করেন।
৮. ভালোবাসার মূল্যায়ন করেন।
৯. ভালো কাজের বা উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং
১০. অন্যকে শ্রদ্ধা করে কথা বলেন।

আশাবাদী মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে—
১. শুরুতে কখনোই দেরি করেন না।
২. সময়ের মূল্য দেন।
৩. অনেক বড় হওয়ার বা বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেন।
৪. কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চান, তবে কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
৫. সমালোচনা থেকে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করেন।
৬. ঠাট্টা-তিরস্কারে ভেঙে পড়েন না।
৭. সৎ ও নৈতিক থাকতে পছন্দ করেন।
৮. মানবসেবাই তাঁদের কাজের উদ্দেশ্য বলে মনে করেন।
৯. নিজের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন এবং
১০. অন্যকে বড় হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ করে দেন।

তবে গবেষকদের মতে যে কেউ চাইলেই তার চেষ্টা ও অধ্যবসায় দ্বারা নিচের খুবই ছোট-ছোট কিছু কাজের মাধ্যমে অতি অল্প সময়েই একজন আশাবাদী মানুষ হয়ে উঠতে পারেন—
১. শত ব্যর্থতা থাকলেও দিন শেষে অন্তত একটি সফলতার কথা ভাবতে হবে এবং তা একটি ডায়েরি/খাতায় লিখতে হবে। অনেকে মনে করতে পারেন দিনে তাঁর কোনো সফলতাই নেই। উইলিয়াম এইচ মেকরেভেন তাঁর ‘মেইক ইউর বেড’ নামক বিশ্ববিখ্যাত বইয়ে লিখেছেন, প্রতিদিন সকালে সঠিকভাবে বিছানা গোছানোর মতো ছোট্ট একটি কাজ শুধু নিজের সফলতা নয়, একটি দেশ বা এমনকি একটি পৃথিবীকেও পরিবর্তন করে দিতে পারে!
২. শত দুর্ভাগ্য থাকলেও দিন শেষে অন্তত একটি সৌভাগ্যের কথা ভাবতে হবে এবং তাও একটি ডায়েরি/খাতায় লিখতে হবে। কেউ যদি মনে করেন আজ তাঁর কোনো সৌভাগ্যই আসেনি, তবে তিনি যে আজও এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে আছেন, সেটা তাঁর ডায়েরিতে সৌভাগ্যের তালিকায় আজকের জন্য যোগ করতে পারেন। কারণ ঠিক এই সময়ে পৃথিবীতে অনেক মানুষ দুর্ভাগ্যের মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।
৩. দিনে সর্বস্ব হারালেও দিন শেষে অন্তত একটি প্রাপ্তির কথা ভাবতে হবে এবং তাও একটি ডায়েরি/খাতায় লিখতে হবে। যাঁরা মনে করেন আজ তাঁদের কোন প্রাপ্তিই নেই, তাঁরা তাঁদের আজকের আহার, বেঁচে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনকে আজকের জন্য প্রাপ্তির তালিকায় লিখতে পারেন। কারণ, অনেকেই আজ অনাহারে আছেন এবং অনেকেরই আজ অক্সিজেন কিনে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়েছে।
যাঁরা মনে করেন এসব তো স্বাভাবিক জিনিস। এসব লিখলে কী হয়? তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- শুধু লিখেই দেখুন। ওপরে বর্ণিত সফলতা, সৌভাগ্য ও প্রাপ্তির এ হিসাব মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে অনেক বদলে দেবে; একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
আর, যদি কোনো কারণে আপনাকে তা বদলে না দেয়, অন্তত আপনার কাছে একটি পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থাকবে যে, এই পদ্ধতি কাজ করে না। মনে রাখবেন, থমাস আলভা এডিসন শুধু কোন কোন পদ্ধতি কাজ করে না—তা পরীক্ষা করেই একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েছিলেন।